মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪

একই পরিবারের তিনজন জীবিত থেকেও মৃত

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » একই পরিবারের তিনজন জীবিত থেকেও মৃত
মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪



একই পরিবারের তিনজন জীবিত থেকেও মৃত

জামালপুর প্রতিনিধি : একই পরিবারের তিনজন নারী জীবিত থেকেও মৃত রয়েছেন এনআইডি তালিকায়। এতে করে ওই বিধবা ও বয়স্কা নারীরা সরকারি ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং বিভিন্ন কাজে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এঘটনা জামালপুরে সরিষাবাড়ী উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের হিরণ্য বাড়ি এলাকায় ঘটেছে।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় , উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের হিরণ্য বাড়ী গ্রামের আলমগীর এর স্ত্রী মোছাঃ আনঞ্জুয়ারা(৩৯), মৃত মেহার আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম(৬৪) ও মৃত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মোছাঃ জাহানারা(৫২) দিব্যি বেঁচে থাকা অবস্থাতেও তাদের এনআইডি তালিকায় মৃত দেখানো হয়েছে।

আনঞ্জুয়ারা জানান, গত ৬ বছর যাবৎ ভোটার আইডি তালিকায় আমাকে মৃত দেখানো হয়। আমি ভোটার আইডিতে মৃত হওয়ায় আমার ছেলে মেয়েদের স্কুলের উপবৃত্তি করাতে পাচ্ছিনা। এছাড়াও ভিজিডি, ভিজিএফ, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি ১৫ টাকা কেজি চাল ও টিসিবি সহ বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে সমস্যা হচ্ছে। আমি মৃত বলে আমার স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র পাইনি। আমি নির্বাচন অফিসে গিয়েছিলাম। তবুও আমার আইডি তারা ঠিক করে দেয়নি। তারা শফিকুল মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছে। শফিকুল মাস্টার এই এলাকার তথ্য সংগ্রহকারী ছিলেন। মনে হয় সে ইচ্ছাকৃতভাবেই আমাকে মৃত বানিয়েছে। আমি ভোটার আইডি ঠিক করার জন্য তাকে টাকাও দিয়েছি। তবুও সে ঠিক করে দেয়নি। সে আজ না কাল বলে শুধু ঘুরাচ্ছে।

বিধবা মরিয়ম বেগম বলেন, আমার স্বামী, সন্তান কেউ নাই। আমার বয়স ৬০ বছরের উপরে। আমি এখন কাজ কাম কিছুই করতে পারি না। সরকার একটি বিধবা ভাতার কার্ড দিয়েছিল। সেটিও আমি মৃত বলে বন্ধ করে দিয়েছে। গত ৮ বছর যাবৎ আমি মারা গেছি, এটাই ভোটার আইডিতে দেখায়। আমি সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পাই না। আমি এবার ভোটও দিতে পারি নাই। দয়া করে আপনারা আমার ভোটার আইডিটি ঠিক করে দিন।

এছাড়াও বিধবা জাহানারা বলেন, গত ৭ বছর যাবত ভোটার আইডিতে আমাকে মৃত দেখানো হয়। আমি একজন জলজ্যান্ত মানুষ। তারা কিভাবে আমাকে মৃত বানায় আমি বুঝিনা। তাদের এই ভুলের কারণে আজ আমি এই ভোটার আইডি দিয়ে কিছুই করতে পারছি না। যেখানেই কোন কিছুর জন্য যাই। তারাই বলে আপনার ভোটার আইডিতে আপনি মৃত। এই আইডি দিয়ে কোন কাজই আপনি করতে পাবেন না। আইডি কার্ড ঠিক করার জন্য শফিকুল মাস্টারের পিছনে অনেক ঘুরেছি। সে এই কার্ডটি ঠিক করে দিচ্ছে না। এই জন্য টাকাও দিয়েছি। আপনারা দয়া করে আমার কার্ডটি ঠিক করে দিন। যাতে করে আমি সরকারের কিছু সহযোগিতা পাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত তথ্য সংগ্রহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম (ভোলা) নিজের ভুলের দায় স্বীকার করে বলেন, এটা আমারই ভুল। আমি এজন্য অপরাধী। আমি এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের কাজ করে দিচ্ছি। এছাড়াও তাদের কাছ থেকে আমি কোন টাকা নেইনি বলে দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন ঐ সকল নারীদের মৃত দেখিয়ে তাদের সুবিধাভোগী বিধবা ভাতার কার্ড অন্যত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব কাজ আমার সময় হয়নি।

অপরদিকে বর্তমান ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনা যখন ঘটেছে তখন আমি মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত ছিলাম না। এইটা দুর্নীতি করছে দুই ব্যক্তি। একজন হলেন সাবেক ইউপি সদস্য আলতাব হোসেন আরেকজন ভোটার তালিকা তথ্য সংগ্রহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম (ভোলা)।

ভোটার আইডি ও বিধবা কার্ডের বিষয়ে মহাদান ইউপি চেয়ারম্যান এ.কে.এম আনিছুর রহমান জুয়েল বলেন, ভোটার আইডিতে তিনজনকে মৃত দেখালেও তারা এখনো জীবিত। যারা তাদের তথ্য সংগ্রহ করেছে তারাই এই ভুলটি করেছে। এছাড়াও জীবিত মরিয়ম বেগমকে মৃত বানিয়ে তার বিধবা ভাতার কার্ড বাতিল করে অন্যজনকে দেওয়ার বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের উপর উত্তেজিত হয়ে বলেন “আপনি এতো পেছাইতাছেন ক্যা আমাকে? শুনেন, অতিরিক্ত সব কিছুই কিন্তু খারাপ ! আপনি সাংবাদিকতা করেন ঠিক আছে। এতো বাড়াবাড়ি করবেন না, মহাদান নিয়ে। মহাদান ইউনিয়ন নিয়ে আর খোঁচাবেন না ফারদার বলে দিলাম”।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন অফিসার সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, তারা আমার কাছে আসলে আমি প্রথমেই তাদের আইডি কার্ডের বিষয়টি সমাধান করবো। কেননা তারা যেন দ্রুত নাগরিক সেবা পান। এছাড়াও অভিযুক্ত তথ্য সংগ্রহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ওই শিক্ষককে আমার স্টাফদের মাধ্যমে আসতে বলেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখবো এবং এর সত্যতা পেলে ঊর্ধ্বতনের সাথে আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

ভোটার আইডি ও বিধবা কার্ড প্রসঙ্গে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, তারা অফিসে এসে বললে এবং আবেদন করলে তাদের আইডি কার্ড সংশোধন ও বিধবা ভাতার বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৪২:২৮   ৭০ বার পঠিত