অস্থির নিত্যপণ্যের বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে সবজির দামে। তবে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী মাছ-মাংস ও চালের দাম। পাশপাশি চড়া রোজার পণ্যের বাজারও। এতে বাজারে এসে বিপাকে সাধারণ ক্রেতারা।
শুক্রবার (২২ মার্চ) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, আগানগর, রাজধানীর কারওয়ানবাজার ও হাতিরপুল কাঁচাবাজারসহবেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে শাক-সবজির দাম।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি পণ্য মজুত থাকায় দাম কমছে। গত ২-৩ দিনে বৃষ্টি না হলে বাজারে আরও বেশি সরবরাহ থাকত। ফলে দাম আরও কমতো।
কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস মিয়া বলেন,
সবজির দাম ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে চলে এসেছে। বৃষ্টি না হলে দাম আরও কমতো।
আর ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সবজির দাম কমতে শুরু করায় কিছুটা স্বস্তি মিলছে। তবে অন্যান্য পণ্যেরও দাম কমলে ভোক্তার কষ্ট লাঘব হবে।
ফাহিম নামে এক ক্রেতা বলেন,
রোজার শুরুর দিকে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছিল শাক-সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম। তবে এ সপ্তাহে কিছুটা কমেছে। আরও কমলে এবং সরকারের বেঁধে দেয়া দাম বাজারে কার্যকর নিত্যপণ্যের দাম ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে আসবে।
বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৫০-৬০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, শিম ৩০-৪০ টাকা, বরবটি ৬০-৭০ টাকা, মুলা ২০-২৫ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা ও লতি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি পেঁপে ৩০-৩৫ টাকা, খিরাই ৩০-৪০ টাকা, গাজর ২০-২৫ টাকা, টমেটো ৩৫-৪০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, শালগম ২৫ টাকা ও পেঁয়াজের কলি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।
আর প্রতি পিস লাউ ৪০-৫০ টাকা, আকারভেদে প্রতিপিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৩০-৪০ টাকা, ব্রকলি ৫০ টাকা ও প্রতি হালি লেবু ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম বেড়েছে আলুর। বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে।
বাজারে দাম কমেছে কাঁচা মরিচেরও। পাইকারিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায় ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়। এ ছাড়া বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পাটশাক ১০ টাকা, পুঁইশাক ২৫ টাকা, কলমি ১৫ টাকা ও পালংশাক ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে দাম কমেছে রসুন ও পেঁয়াজের। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। বিক্রেতারা বলেছেন, ফরিদপুরে হালি পেঁয়াজ পুরোদমে বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এতে কমছে দাম।
আর কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত কমে প্রতিকেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। তবে আমদানিকৃত রসুনের কেজি এখনো ২০০ টাকা। আদা আগের বাড়তি দামেই ২০০ থেকে ২২০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে।
তবে একদিকে যখন সবজির দামে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে বাজারে, তখন ক্রেতার ঘাম ঝরাচ্ছে চাল ও মাছ-মাংসের দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে পাইকারিতে ৫০ কেজির চালের বস্তার দাম মানভেদে বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, খুচরায় কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত।
বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট ৭০-৭১ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকা, গুটিস্বর্ণা ৫১-৫২ টাকা ও ব্রি-২৮ ৫৫-৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে যা বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৬৬-৬৮ টাকা, ৭২ টাকা, ৪৯-৫০ টাকা ও ৫১-৫২ টাকায়।
রাকিব নামে এক চাল ব্যবসায়ী বলেন,
অন্যান্য বছর এই সময়ে কখনও চালের দাম বাড়েনি। এ বছর হুট করেই দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে মিলগেটে।
পাইকার ও আড়তদাররা জানান, কয়েকটি মিল সিন্ডিকেট করে চাল মজুত করে রেখেছে। যার প্রভাবে দাম বাড়ছে বাজারে। আর মিলাররা জানান, ধান ও শ্রমিক সংকটের কারণে দেশের বাজারে বাড়ছে চালের দাম।
সপ্তাহ ব্যবধানে দাম না বাড়লেও মুরগি ও গরুর মাংস এখনও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০-৩৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৮০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৬০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৩০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৭০০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে মুরগির সরবরাহ কিছুটা কম। তাই দাম কমছে না। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের বিক্রেতা রিপন বলেন, পাইকারিতে দাম না কমায় খুচরা পর্যায়েও দাম কমছে না।
এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫০-১০০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। তবে বাড়েনি খাসির মাংসের দাম। বিক্রি হচ্ছে হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়। আর ছাগলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
মাংস বিক্রেতারা বলছেন, গরুর মাংসের দাম খুব শিগগিরই কমার সম্ভাবনা নেই। গরুর দাম বাড়ায় বাড়ছে মাংসের দামও। যারা কম দামে মাংস বিক্রি করেছে এতদিন, তারাও এখন দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে দাম কমেছে ডিমের। প্রতি ডজন লাল ডিম ১৩০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৪৫-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মাছের বাজারে দেখা যায়, চড়া বেশিরভাগ চাষের ও দেশি মাছের দাম। বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে মাছের সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। তবে দাম কমেছে কয়েকটি চাষের মাছের।
বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ১৮০-২২০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০-২০০ টাকা, চাষের শিং ৫০০ টাকা, চাষের মাগুর ৫৫০ টাকা ও চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকায়। আর আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, বাইম ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকার ওপরে।
কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী বাদশা বেপারী বলেন, বাজারে দেশি মাছের সরবরাহ কমায় দাম বাড়ছে। এ ছাড়া রোজায় বাজারে ক্রেতা নেই। তাই দাম কিছুটা বেশি।
এদিকে রমজান শুরুর আগেই অস্থির হয়ে ওঠা রোজার পণ্যের বাজারের রেশ এখনও কাটেনি। দুই-একটি পণ্যের দাম কমলেও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে প্রায় সব পণ্য।
বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০-১২০ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৮৫-৯০ টাকা, ডাবলির ডাল ৮৫ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ১০৫ টাকা, চিকন মসুর ডাল ১৩৫-১৪০ টাকা, মোটা দানার মুগ ডাল ১৪৫-১৫০ টাকা, চিকন মুগ ডাল ১৭০-১৮০ টাকা ও খেসারি ডাল ১১০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে বেসন ১৪০-১৬০ টাকা, খোলা আটা ৫০-৫৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৫৮-৬০ টাকা, খোলা ময়দা ৬৫-৭০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৭০-৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়, আর প্যাকেটজাত চিনি তো বাজার থেকেই উধাও!
নিত্যপণ্যের অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।
আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৭:৫২ ৭০ বার পঠিত