পর্যাপ্ত মজুত আছে; আর বাজার নিয়ন্ত্রণেও নেই ব্যর্থতা — এমন দাবি করার পরও ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিলো খাদ্য মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনে দেয়া হবে আরও অনুমতি। খাদ্য সচিব বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতেই এ উদ্যোগ। তবে খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, এতে বাজারে কলকাঠি নাড়ার আরও সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে বড় বড় ব্যবসায়ীদের।
চলতি বছরের শুরুর দিকে হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠেছিল দেশের চালের বাজার। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও মন্ত্রণালয় এবং খোদ খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার পরিচালিত বাজার অভিযানে কিছুটা স্বাভাবিক হয় চালের বাজার। তবে রমজানের শুরু থেকে হঠাৎ করে আবারও বাড়তে শুরু করেছে চালের দাম।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানিয়েছিলেন, চালের বাজার স্থিতিশীল। রমজানে বাড়বে না চালের দাম।
তার এ ঘোষণার কয়েকদিন পরেই যখন অস্থির চালের বাজার, তখন ভোক্তারা জানান, চালের দাম বাড়বে না, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের এমন ঘোষণার কোনো তোয়াক্কাই করছেন না মিল মালিকরা। মন্ত্রী-সচিবদের কথার কোনো দাম নেই।
চালের বাজারে এসে দামের উত্তাপে পোড়া ভোক্তারা যখন এভাবেই তুলে ধরেন সরকারি কর্তাদের নির্দেশনা আর বাস্তবতার ফারাক-ফিরিস্তি। তখন সচিবালয়ে বসে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন দাবি করেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে কোন ব্যর্থতা নেই তাদের।
তিনি বলেন,
চালের মজুত পর্যাপ্ত থাকার পরও শুধু ভোক্তারা যেন দামের কারসাজিতে না পড়েন সেজন্য নেয়া হয়েছে আমদানির উদ্যোগ। যেখানে ৩০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করে আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বিক্রি করার অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের এমন উদ্যোগে বাজারে কতোটুকু ইতিবাচক প্রভাব পড়বে; তা নিয়ে সন্দিহান খুচরা-পাইকারি বিক্রেতাদের আত্মবিশ্বাসী দাবি, মিলারদের গোডাউন আর বড় বড় ব্যবসায়ীদের পকেট ভারি করতে ভূমিকা রাখবে সরকারের এ উদ্যোগ।
ঘরপোড়া গরুর মতো জিম্মি দশা থেকে মুক্তি মিলবে বলে আস্থা পাচ্ছেন না ক্রেতারাও। তারা বলেন, সব জিনিসেরই দাম বেশি। কোনো পণ্যেই স্বস্তি নেই।
গরম বাজার ঠাণ্ডা করতে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর যে কোন উদ্যোগই ভালো। তবে, আস্থার সংকট দূর করতে না পারলে কোনভাবেই পণ্যের সংকট দূর করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবির বলেন, ব্যবসায়ীরা অহেতুক দাম বাড়িয়ে বাজারে আস্থার জায়গাটা নষ্ট করেছে। তাই সংকট দূর করতে আগে আস্থার সংকট দূর করতে হবে।
পরিসংখ্যান বলছে, ধান চাল গম মিলে সরকারের গুদামে যে ১৪ লাখ ৬৯ হাজার ২৭৮ মেট্রিক টনের বেশি খাদ্য মজুত আছে; তা দিয়ে দৈনিক চাহিদার বিপরীতে সরকার চাইলে এককভাবে ২০ থেকে ২১ দিনের যোগান নিশ্চিত করতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:১৬:১৯ ৬৪ বার পঠিত