বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, সোনালী ব্যাগের জন্য প্লাস্টিক ব্যবসায়ীরা বড় বাধা হলেও আমরা জয়ী হবো। পলিথিন নয় মানুষের হাতে থাকবে পাট থেকে তৈরি সোনালী ব্যাগ। এজন্য দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি জানান, জুলাইয়ে ১০০ কোটি টাকা অর্থ ছাড় হলে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হবে। এজন্য বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে।
মন্ত্রী আজ ডেমরায় লতিফ বাওয়ানী জুট মিলস প্রাঙ্গণে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমদ খান উদ্ভাবিত সোনালী ব্যাগ উৎপাদন কারখানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন। এসময় বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমদ খান ছাড়াও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, বিজেএমসি’র চেয়ারম্যান ফারুক আহম্মদ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে প্লাস্টিক বা পলিথিনের অতি ব্যবহারের কারণে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি বিপদসংকুল পরিবেশে পতিত হবে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমদ খানকে সার্বিকভাবে সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন। প্লাস্টিক বা পলিথিনের বিকল্প হিসেবে আমরা পাট থেকে প্রস্তুত করা এই সোনালী ব্যাগ ব্যবহার করবো। ড. মোবারক আহমদ খানের এই সোনালী ব্যাগ প্রকল্প কোন পর্যায়ে আছে তা স্বচক্ষে আজকে দেখতে এসেছি। আমি মনে করি বাঙালী জাতি অনেক সৃষ্টিশীল। আমরা এই জায়গায় অনেক এগিয়ে যাব।’
ড. মোবারক একজন কেমিস্ট হয়েও নিজেই কাস্টমাইজ করে মেশিনারিজ তৈরি করায় তার ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে প্রয়োজনীয় পুঁজিসহ একটি প্রকল্প দিয়েছেন। প্রায় ১০০ কোটি টাকার। এ ব্যাপারে যতরকম সহযোগিতা দরকার তা করা হবে। আমরা সামনে পলিথিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে যে অভিযান পরিচালনা করব তার আগে জনসাধারণের হাতে বিকল্প তুলে দিতে হবে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই চেষ্টা করে যাচ্ছি পলিথিনের বিকল্প সোনালী ব্যাগকে উৎপাদনে এনে ব্যাপকভাবে মানুষের হাতে তুলে দিতে।
ঈদের পরে কোনো পাট কল চালু হচ্ছে কিনা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ঠিক ঈদের পরেই চালু হবে এমনটা নয়, তবে মিলগুলি তৈরি হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে চালু হবে আশা করি।
এসময় বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমদ খান বলেন, সোনালী ব্যাগ এমন একটা পণ্য যাতে প্লাস্টিক নাই। আপনারা জানেন বায়োডিগ্রেডিবল যে প্লাস্টিক ব্যাগ পাওয়া যায় সেগুলো গতবছরের ২৮ মে প্রতিবেশি দেশ ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কানাডাতেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেননা সেগুলো শতভাগ পরিবেশবান্ধব নয়।
আমাদের এই সোনালী ব্যাগ বায়ো-ডিগ্রেডেবল এবং শতভাগ পরিবেশ বান্ধব। এটি কার্বন নেগেটিভ পণ্য।
পানিতে গলে যাবে কিনা এরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ভোক্তার চাহিদা অনুয়ায়ী এটা বানাতে পারি। যেমন শপিং ব্যাগ ৮ ঘন্টায় পানিতে মিশে যায়। এটাকে ৬ মাস মেয়াদী করতে পারি।
ড. মোবারক জানান, এখন প্রতিদিন ২৫০ কেজি পরিমাণ উৎপাদন করা হচ্ছে। আমাদের যে সক্ষমতা আছে তাতে আমরা এখনি ১ টন উৎপাদন করতে পারব। ১ কেজিতে গড়ে ১০০ ব্যাগ করা যায়। প্লাস্টিক বাধার সৃষ্টি করলেও সোনালী ব্যাগ মানুষ গ্রহণ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। কারণ ভালো যেকোনো কিছু মানুষ গ্রহণ করে। আপনারা দেখবেন এখন একজন রিকসাওয়ালাও মোবাইল ব্যবহার করে, কিনে মিনারেল ওয়াটার খায়। মানুষের সচেতনতা যখন বাড়বে, মানুষ যখন ভালো বোধ করবে তখন প্লাস্টিকের বাধা অতিক্রম করা যাবে। তবে অন্যান্য দেশের মতো প্লাস্টিক ও পলিথিন নিষিদ্ধ করে সরকারকে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:২০:১৩ ৭৮ বার পঠিত