ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে মন্দিরে আগুন দেওয়ার সন্দেহে আপন দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ওই এলাকা পরিদর্শন করছেন রেলপথমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে দুই মন্ত্রী ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
দুই মন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয় যেখানে দুই ভাইকে হত্যা করা হয় সেখানে পরিদর্শন করেন এবং ঘটনার দিন মন্দিরে সন্ধ্যা প্রদীপ যিনি জ্বালিয়েছিলেন সেই তপতী রাণীর সঙ্গে কথা বলেন।
পরিদর্শন শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান সাংবাকিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ফরিদপুরের ডুমাইনে যে ঘটনা ঘটেছে এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। কোনো মানুষ এই নারকীয় ঘটনা ঘটাতে পারে এটা আসলে অবিশ্বাস্য। এই ঘটনার আইনগতভাবে তদন্ত হবে। তদন্ত সাপেক্ষে এর পেছনে অন্য কোনো উস্কানি আছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের ভেবে দেখতে হবে। এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতীক এবং এটি আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বিষয়। সুতরাং অসম্প্রদায়িক দেশে চক্রান্তকারীদের কোনো জায়গা হবে না।
প্রতিটি মোড়ে পুলিশ যে পাহারা দিচ্ছে এটা কতদিন চলবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, যতদিন এলাকা স্বাভাবিক না হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করবে ততদিন পর্যন্ত চলবে।
মধুখালীর ডুমাইনে রেলমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল হাকিম সাংবাদিকদের বলেন, সব ধরনের হত্যাকাণ্ড ইসলামে নিষেধ আছে। ইসলামে এমন বিধান নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। দেশ ও সমাজ যেন শান্তিতে চলে সে জন্য ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ডুমাইনে যে ঘটনাটা ঘটানো হয়েছে সেটা সত্যি ন্যাক্কারজনক। এই ঘটনার পেছনে যারা রয়েছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যারা দায়ী তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এ সময় ঢাকা বিভাগের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান তালুকদার, পুলিশ সুপার মো. মোরশেদ আলম, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক (আরিফ) উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সন্ধ্যায় রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের ধর্মতলা আদর্শ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত শান্তি ও সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম।
শান্তি ও সম্প্রীতি অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী বলেন, ইসলাম ধর্ম কোনো মানুষ হত্যাকে সাপোর্ট করে না। যারা মানুষ হত্যা করে তারা নিকৃষ্ট। পাশের ইউনিয়নে (ডুমাইন) মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া সন্দেহে যে দুই ভাইকে হত্যা করা হয়েছে তা বর্বরচিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃত। একটি গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক ইস্যু বানিয়ে দেশকে অস্থীতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা তা কখনো হতে দেব না।
পঞ্চপল্লীর পাশ্ববর্তী এলাকা সনাতন ধর্মাম্বলী অধ্যুষিত জঙ্গল ইউনিয়নের বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে রেলমন্ত্রী আরো বলেন, আপনাদের কোনো ভয় নেই। আপনাদের পাশে সরকার রয়েছে। কোন ষড়যন্ত্রকারী রক্ষা পাবে না। যারা প্রকৃত হত্যাকারী তাদের বিচার হবেই। আপনারা নির্ভয়ে চলাফেরা করবেন। কোনো গুজবে কান দেবেন না। যে কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে জানাবেন।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) হাসিবুল হাসানের সভাপতিত্বে শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মুকিত সরকার, বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন, জঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কল্লোল বসু, সমাধীনগর আর্য সংঘ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারোদ বাছার প্রমুখ। শান্তি সমাবেশে প্রায় সহস্রাধিক সনাতন ধর্মাম্বলীর নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৪:১১ ৮৬ বার পঠিত