ভারতীয় চোরাচালান কারবারির কাছে ৪০০ কোটি টাকার কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতব মুদ্রা বিক্রির প্রস্তাব থেকে পূর্বপরিচিত মোস্তফা হাওলাদারের কাছ থেকে মূর্তি ও ধাতব মুদ্রা ক্রয় করেন খোকন হাজী। কিন্তু খোকনকে একটি প্লাস্টিকের বাক্সে নকল ধাতব মুদ্রা প্রদান করে কাছ থেকে ৯৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন মোস্তফা। এ ঘটনায় মোস্তফা হাওলাদারকে পাগলের মতো খুঁজতে থাকেন মোস্তফা হাওলাদারকে।
এক পর্যায়ে খোকন জানতে পারেন, মোস্তফা হাওলাদারের ভায়রা-ভাই ফতুল্লা থানার তুষারধারা এলাকায় একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। তাকে ধরতে পারলে মোস্তফা হাওলাদারের সন্ধান পাওয়া যাবে। এর প্রেক্ষিতে আনোয়ারকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় নিয়ে এসে মুক্তিপণ দাবি করে খোকন।
এ ঘটনায় অপহরণ চক্রের মূলহোতা খোকন হাজীসহ (৬৫) মোট সাত জনকে গ্রেপ্তারসহ ভিকটিম উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)। বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন: মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূলহোতা হাজী ওয়াজী উল্লাহ্ খোকন (৬৫), মো. আরিফ হোসেন (৫৫), সাইফ উদ্দিন আহমেদ মিলন (৬২), সিরাতুল মোস্তাকিম (৫৮), মো. রুহুল আমিন (৬০), মো. জাকির হোসেন (৩০), ও মো. স্বাধীন (৫২)। অপহৃত ভিকটিমকে আসামিদের হেফাজত হতে উদ্ধার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে রিভলভার, ৮ রাউন্ড রিভলবারের গুলি ও শটগান জব্দ করা হয়।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর এসব তথ্য জানান।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ফিরোজ কবীর জানান, বুধবার রাত সোয়া ৯ টার দিকে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন তুষারধারার একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে খোকন হাজীর নেতৃত্বে ৮-৯ জনের একটি অপহরণকারী চক্র ভিকটিম আনোয়ারের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় খোকন হাজীর ‘চুনকুটিয়া রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’ অফিসের ভিতরে আটকে রেখে ভিকটিমের উপর লোহার রড, পাইপ ও লাঠি দিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালায় এবং মোবাইলে তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ বাবদ ৯৫ লক্ষ টাকা দাবি করে ।
ভিকটিমের ছোটভাই তার ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে অপহরণকারী চক্র কর্তৃক প্রদানকৃত একটি ব্যাংক হিসাব নাম্বারে প্রেরণ করে। উক্ত টাকা প্রদানের পরও অপহরণকারীরা ভিকটিমের উপর নির্যাতন অব্যাহত রাখে এবং তার পরিবারকে বাকি টাকা প্রদানের জন্য হুমকি প্রদান করতে থাকে। বাকি টাকা প্রদান না করলে তাকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়।
ফিরোজ কবীর বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর গোয়েন্দা দল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী চক্রের ৭ সদস্যকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে ভিকটিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সেইসঙ্গে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত রিভলভার, ৮ রাউন্ড রিভলভারের গুলি ও শটগান জব্দ করা হয়।
সংবাদ র্যাব সম্মেলনে তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃত খোকন হাজী ২০১৫ সাল থেকে দেশের মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রা ভারতে পাচার করে আসছিল। তার মূল ক্রেতা ছিলে মিলন চক্রবর্তী নামের এক ভারতীয় নাগরিক। যিনি নিজেকে একটি বিখ্যাত ভারতীয় কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিতেন।
র্যাব জানায়, খোকন হাজী ২০১৫ হতে ২০১৭ সালের মধ্যে কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতব মুদ্রার ৭টি চালান ভারতে পাচার করেছিল। খোকন হাজীর কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতবমুদ্রা সংগ্রহের কাজে নাঈম (৩৫), মোস্তফা হাওলাদার (৫০) ও রবি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দেশব্যাপী কাজ করতো। বিনিময়ে এদেরকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হত।
ভিকটিমকে পরিবারের নিকট হস্তান্তর এবং গ্রেপ্ততারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানায় র্যাব।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৫:৫৩ ১০৩ বার পঠিত