বাংলাদেশে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার ডেরেক লো বলেছেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সিঙ্গাপুরের জন্য বাংলাদেশের বিশেষ করে চট্টগ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রামের বে-টার্মিনালে সিঙ্গাপুরের শিপিং কোম্পানি পিএসএ বিনিয়োগ করছে, বে-টার্মিনাল ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে এ আন্তর্জাতিক বৃহৎ বন্দরে উপনীত হবে। এ সূত্রে দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। হাই কমিশনার আজ ৪ মে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র পরিচালকম-লীর সাথে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ চেম্বার কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে চেম্বার প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ, সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব, পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, মো. রকিবুর রহমান (টুটুল), মাহফুজুল হক শাহ, বেনাজির চৌধুরী নিশান, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, আখতার উদ্দিন মাহমুদ, মোহাম্মদ সাজ্জাদ উন নেওয়াজ, ওমর মুক্তাদির, এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর-এর দক্ষিণ এশিয়ার ডেভেলপমেন্ট পার্টনার ক্লারেন্স চং, সিঙ্গাপুরের শিপিং কোম্পানি পিএসএ’র লিম উই চিয়াং, বাংলাদেশ প্রতিনিধি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জহির বক্তব্য রাখেন।
এ সময় সিঙ্গাপুর হাইকমিশনের চার্জ দ্যা এফেয়ার্স শীলা পিল্লাই, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর মিশেল লী ও কর্মকর্তা এস্টার লী, চেম্বার পরিচালক এ. কে. এম. আক্তার হোসেন, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), মোহাম্মদ আদনানুল ইসলাম, এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর-এর বেনজামিন চু ও পিএসএ’র ওং ঝি পিং উপস্থিত ছিলেন।
হাইকমিশনার বাংলাদেশের এগ্রো এবং ফিশিং সেক্টরের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, সিঙ্গাপুর ছোট দেশ হওয়ায় সবজি, ফলমূল এবং মিঠা পানির মাছ বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা থেকে আমদানি করে। দূরত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে এ সকল পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, লজিস্টিক্স সেক্টরে বিশ্বে উন্নত সিঙ্গাপুর। বাংলাদেশেও রয়েছে লজিস্টিক্স সেক্টরের অফুরন্ত সম্ভাবনা। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সিঙ্গাপুরের লজিস্টিক্স সেক্টর সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারেন। তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরতে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সিঙ্গাপুর সফরের আমন্ত্রণ জানান। একই সাথে সিঙ্গাপুরের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস স্থাপনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের প্রধান উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক অংশীদার। উভয় দেশই নবায়নযোগ্য জ্বালানি, লজিস্টিক্স এবং ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের জন্য একসাথে কাজ করতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতামূলক চুক্তি করেছে। এছাড়া উভয়দেশের মধ্যে ডাবল ট্যাক্সেশন এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক চুক্তিও রয়েছে। চট্টগ্রামের সাথে রয়েছে সিঙ্গাপুরের দারুণ সাদৃশ্য। তাই চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে এশিয়ার বৃহত্তম বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে বিনিয়োগসহ বাংলাদেশের ভৌগোলিক সুবিধা, বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, সুলভ মূল্যের শ্রমিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পর্যটন, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত মৎস্য, হস্তশিল্প, প্লাস্টিক, কোল্ড চেইন, লজিস্টিক্স, খেলনা, মিঠা পানির মাছ এবং এগ্রো প্রসেসিং সেক্টরে বিনিয়োগের আহবান জানান। একই সাথে সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা প্রদানে চিটাগাং চেম্বারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
চেম্বার সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব জনশক্তিকে মানবসম্পদে পরিণত করতে সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীদের যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন টেকনিক্যাল সেন্টার স্থাপন ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের আহবান জানান। একই সাথে সিঙ্গাপুরের সাথে বাংলাদেশের কানেক্টিভিটি বাড়াতে বাংলাদেশে মিশন শক্তিশালীকরণ এবং চট্টগ্রামে মিশন স্থাপনের আহবান জানান।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, শিপিং খাতে অনুকরণীয় দেশ হচ্ছে সিঙ্গাপুর। বাংলাদেশের চলমান বে-টার্মিনাল প্রকল্পে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ শিপিং সেক্টরের ব্যবসায়ীদের মনে আশার সঞ্চার করেছে। সিঙ্গাপুরের পিএসএ কোম্পানি বে-টার্মিনালকে আন্তর্জাতিক টার্মিনালে পরিণত করবে। তারা একই সাথে বাংলাদেশে ইলেক্ট্রনিক খাত, ডিস্যালাইনেশন, শিক্ষা, প্রযুক্তি, কারিগরি এবং শিপিং খাতে সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীদের একক বা যৌথ বিনিয়োগের আহবান জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪২:৩৬ ৮২ বার পঠিত