জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর ‘বিশ্বস্মৃতি’ বা ‘ওয়ার্ল্ড মেমোরি’র তালিকায় স্থান পেয়েছে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের লেখা নারীর মুক্তিপ্রত্যাশী উপন্যাস ‘সুলতানা’স ড্রিম’। এর মধ্য দিয়ে বাংলা অঞ্চলে নারীস্বাধীনতার অন্যতম পথিকৃৎ রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ঐতিহ্যগত উত্তরাধিকারের স্বীকৃতি পেল বাংলাদেশ।
মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলান বাটোরে ইউনেসকোর ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড কমিটি ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক’ বা মৌক্যাপের দশম সাধারণ সভায় ঘোষণাটি দেওয়া হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মৌক্যাপের কাছে ‘সুলতানা’স ড্রিম’-এর নামের আবেদন জানিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
৮ থেকে ১০ মে মঙ্গোলিয়ার উলান বাটোরে অনুষ্ঠিত হয় মৌক্যাপের সাধারণ সভা। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ স্বীকৃতি গ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। রোববার মঙ্গোলিয়া থেকে দেশে ফিরে তিনি ইউনেসকোর তালিকায় রোকেয়ার সুলতানা’স ড্রিম’ এর স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে নারী জাগরণের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার হলো বাংলাদেশ। তবে দেশে ও দেশের বাইরে এই নিয়ে আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে।’
মফিদুল হক জানান, ইউনেসকোর এবারের তালিকায় বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নয়টি দেশের আরও ১৯টি স্মরণীয় প্রামাণ্য দলিল অন্তর্ভুক্ত হয়। সেগুলোর মধ্যে আছে ভারতের তুলসীদাস রচিত ‘রামচরিত মানস’-এর পাণ্ডুলিপি, চীনের ঐতিহ্যবাহী চেংরু টি হাউস মহাফেজখানা অথবা ইন্দোনেশিয়ার ইমাম বনজলের পাণ্ডুলিপি। স্বীকৃতির তালিকায় দ্বিতীয় নামটি বাংলাদেশের।
বিজ্ঞান কল্পগল্পের আদলে লেখা রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নারীর মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ এই কাহিনী ১৯০৮ সালে কলকাতার এস কে লাহিড়ী অ্যান্ড সন্স থেকে লেখাটি বই হিসেবে প্রকাশিত হয়। তবে লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯০৫ সালে, মাদ্রাজের দ্য ইন্ডিয়ান লেডিজ ম্যাগাজিনে। দিল্লির প্রাইম মিনিস্টার মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরিতে সেটি সংরক্ষিত আছে। মিউজিয়ামের পক্ষ থেকে এর ডিজিটাল ভার্সন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে উপহার দেওয়া হয়। রোকেয়া-পরিবারের উত্তরসূরি মাজেদা সাবের মূল বইয়ের একটি প্রতিলিপিও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে উপহার দিয়েছেন।
রোকেয়ার লেখাটিসহ দ্য ইন্ডিয়ান লেডিজ ম্যাগাজিনের একটি কপি ব্রিটিশ লাইব্রেরির দক্ষিণ এশিয়া শাখাতেও সংরক্ষিত আছে। এসব প্রমাণসহ রোকেয়ার প্রভাবের নজির হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল, রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি তথ্য ইউনেসকোর নির্বাচন কমিটির কাছে পাঠানো হয়। তাতে আরও সংযুক্ত করা হয় ১৯৮০ সালে ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নামে মঞ্চায়িত নাটক, ২০২৩ সালে স্পেনের নারী পরিচালক মিগেল হার্নান্দেজের পূর্ণদৈর্ঘ্য অ্যানিমেশন কাহিনীচিত্র ইত্যাদি। এর আগে ইউনেসকোর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের তালিকায় আন্তর্জাতিকভাবে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৮:৫৭ ৮১ বার পঠিত