রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পূর্ণ নাগরিক মর্যাদায় দ্রুত প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা জরুরি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পূর্ণ নাগরিক মর্যাদায় দ্রুত প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা জরুরি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪



রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পূর্ণ নাগরিক মর্যাদায় দ্রুত প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা জরুরি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার ও উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন সংকট এখন আঞ্চলিক সংকটে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সংকট আরও গভীর হতে পারে। তাই দ্রুততম সময়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পূর্ণ নাগরিক মর্যাদায় প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা জরুরি এবং এটাই একমাত্র স্থায়ী সমাধান। একইসাথে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ভারত ও চীনকে আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত করা গেলে সংকট দ্রুত সমাধান সম্ভব বলে মতপ্রকাশ করেন তিনি। আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ওভারসিজ করেসপন্ডেন্টস এসোসিয়েশন,বাংলাদেশ (ওকাব)এর ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট : ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা কূটনৈতিক পথ অবলম্বন করছি। একইসঙ্গে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছি। আমরা গাম্বিয়া ও ওআইসি’র মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা করেছি। সেই মামলায় এখন পর্যন্ত যে ‘আউটকাম’ এসেছে, সেটি আমাদের পক্ষে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গাম্বিয়া বলেছে, মামলা সঠিক পথে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত এই মামলার ইতিবাচক ফল আসবে।” ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “আমরা আশা করছি, আইসিজে’র মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক চাপ মিয়ানমারের ওপর পড়বে। আমরা ক্রমাগতভাবে চেষ্টা করেছি, আন্তর্জাতিকভাবে যেসব দেশের প্রভাব মিয়ানমারের ওপর আছে, তাদের এই বিষয়ে যুক্ত করার। কয়েকদিন আগে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। তার সঙ্গেও রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনায় সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু পরামর্শ তিনি আমাদের দিয়েছেন।”
এ সময় বছরের শুরুতে উগান্ডায় মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়টি উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ওই বৈঠক থেকে আমার কাছে মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক সমালোচনা এড়ানোর জন্য হলেও মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। কিন্তু মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রাখাইন প্রদেশে এখন যে পরিস্থিতি, সেখানকার সেনাবাহিনী পালিয়ে আমাদের এখানে আসছে। এটিকে অন্তরায় মনে হলেও গত ৬০ থেকে ৭০ বছর ধরে মিয়ানমারের পরিস্থিতি কখনোই তেমন শান্ত ছিলো না। তাই এর মধ্যেই আমাদের চেষ্টা এগিয়ে নিতে হবে।’ রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ দিতে বলেছে। ক্যাম্পে তারা কিছু কাজ করছে। কিন্তু তাদের পুরোপুরি জীবিকা নির্বাহের নিশ্চয়তা আমরা কীভাবে দেব? রোহিঙ্গাদের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা সমাধান নয়। একমাত্র সমাধান হচ্ছে সব অধিকারসহ তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওকাবের কার্যকরী কমিটির সদস্য ফরিদ আহমেদ। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের অব্যাহত অবস্থান বাংলাদেশের অর্থনীতি, জীববৈচিত্র্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে। রোহিঙ্গারা মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, সন্ত্রাসী তৎপরতা, পাচারের মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। অনেকে মানব পাচারকারীদের শিকার হচ্ছেন এবং ক্যাম্প থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে ভ্রমণের চেষ্টা করছে। এমনকি তারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট ও এনআইডি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে মানবিক দিক ও প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট এখনো বিশ্বব্যাপী একটি বড় সমস্যা। এই সংকটের আরও অনেক গভীরে যেতে হবে। যত দিন যাবে এই সমস্যার গভীরতা আরও বাড়বে৷ তাই শান্তিপূর্ণ উপায়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর সমাধানে আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে একযোগে উদ্যোগী হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, শুরুর দিকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক যে সমর্থন ছিল, তা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, গাজা-ইসরাইল যুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গা সংকট বিশ্বব্যাপী অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনকে বাধাগ্রস্ত করছে। রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংখ্যা দিক থেকে বাঙালিরাই এখন উখিয়ায় সংখ্যালঘু। সেখান থেকে তারা শুধু টেকনাফ কক্সবাজার নয় সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ক্যাম্পগুলোতে আরসাসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর কার্যক্রম বাড়ছে কি না, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, ডিক্যাব সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্য শেষে উপস্থিত অতিথিরা ওকাব সদস্যদের সাথে সংগঠনের ৪৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে কেক কাটায় অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২:২৪:৪২   ৬৬ বার পঠিত