কয়েকদিনের ব্যবধানে তিনটি সমুদ্রগামী মাদার ভেসেল রেজিস্ট্রেশন করিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের তিনটি শিপিং প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশনে মেঘনা গ্রুপের মেঘনা সেঞ্চুরি পাচ্ছে শততম স্থান। এ নিয়ে বাংলাদেশি মালিকানাধীন সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা দাঁড়ালো ১০১টিতে। ৫ বছরেই ৭৮টি জাহাজ কিনেছেন বাংলাদেশি মালিকেরা। তবে, বাল্ক পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা বাড়লেও নানা জটিলতায় অতি গুরুত্বপূর্ণ কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে না।
বাংলাদেশি মালিকানাধীন শততম জাহাজের রেজিস্ট্রেশন পেতে সমানতালে লড়াই করছিল দেশের প্রতিষ্ঠিত চারটি শিল্প গ্রুপ। এর মধ্যে মেঘনা গ্রুপের মেঘনা সেঞ্চুরি নামের জাহাজটিই শততম স্থানে প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে। এর আগে এবং পরে রয়েছে কেএসআরএম গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের জাহান ওয়ান এবং ভ্যানগার্ড গ্রুপের রয়েল আরাকান জাহাজ।
গ্রাফিক্স চিত্রে ১০০তম বাংলাদেশি জাহাজ রেজিস্ট্রেশনের লড়াইয়ে থাকা জাহাজের তালিকা
তবে এই তিনটি জাহাজ এখনো বাংলাদেশে আসেনি। এক্ষেত্রে যে জাহাজটি প্রথমেই বাংলাদেশে প্রবেশ করে ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদানসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে সেটিই স্থায়ী স্থান লাভ করবে।
নৌ বাণিজ্য অধিদফতরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, প্রভিশনাল রেজিস্ট্রেশন দিয়ে ইতোমধ্যেই দেশে ১০০টি জাহাজ পূর্ণ হয়েছে। এখন পারমানেন্ট রেজিস্ট্রেশন দিয়ে ১০০ জাহাজের তালিকা পূর্ণ হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা।
মূলত ২০১৯ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পূরক শুল্ক আইন নিয়ে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জাহাজ কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠে বাংলাদেশের জাহাজ মালিকেরা। আগে বিদেশি জাহাজ কিনে বাংলাদেশের বহরে যুক্ত করার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হলেও পরবর্তীতে তা কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়।
আর এই সুযোগে গত ৫ বছরে জাহাজ কেনা হয়েছে ৭৮টি। ওই বছরে জাহাজ কেনা হয় ১৩টি। অবশ্য পরবর্তীতে ২০২০ এবং ২০২২ সালে জাহাজ কেনা হয়েছে রেকর্ড ১৫টি করে। আর চলতি বছরের গত ৫ মাসে ব্যবসায়ীরা মাদার ভেসেল কিনেছেন ৬টি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, সারা বিশ্ব কন্টেইনারবাহী জাহাজের দিকে ঝুঁকছে। তাই দেশীয় ব্যবসায়ীদেরও সেদিকেই তাল মেলানো প্রয়োজন।
বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজগুলোর মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক ৭৭টি জাহাজ হলো কার্গো পণ্যবাহী বাল্ক জাহাজ। এছাড়া ৯টি কন্টেইনারবাহী, ৩টি এলপিজি বহনকারী, ৫টি কেমিক্যাল ট্যাংকার এবং ৭টি অয়েল ট্যাংকার।
ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নানা জটিলতার কারণে কন্টেইনারবাহী জাহাজ কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। আগামী ৬ মাসের জন্য নতুন জাহাজের যেসব রেজিস্ট্রেশন আবেদন জমা পড়ছে তার মধ্যে কোনো কন্টেইনারবাহী জাহাজ থাকছে না।
দেশের অন্যতম ইস্পাত প্রস্তুতকারী শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, কন্টেইনারের ট্রান্সশিপমেন্ট ও অন্যান্য কারণে কন্টেইনারবাহী জাহাজের প্রতি ঝোঁক বাড়তে দেশের ব্যবসায়ীদের কারও কিছুদিন সময় লাগবে।
বাংলাদেশ সমুদ্র বাণিজ্য অধিদফতরের তালিকা অনুযায়ী, শিল্পগ্রুপগুলোর মধ্যে সমুদ্রগামী জাহাজের ক্ষেত্রে মেঘনা গ্রুপ এবং এস আর শিপিংয়ের মালিকানায় রয়েছে ২৫টি করে মাদার ভেসেল। এরপর আকিজ গ্রুপের ১০টি, এইচ আর শিপিংয়ের ৮টি, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান শিপিং কর্পোরেশনের ৭টি, ভ্যানগার্ড গ্রুপের ৭টি এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ৬টি জাহাজ পণ্য পরিবহন করছে।
বিশ্ব সমুদ্র পরিবহন বাণিজ্যে কন্টেইনারবাহী জাহাজের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরেই বছরে ২ হাজারের বেশি কন্টেইনারবাহী জাহাজ আসা-যাওয়া করছে। তার বিপরীতে বাংলাদেশি মালিকানাধীন কন্টেইনারবাহী জাহাজ রয়েছে মাত্র ৯টি। আর তাই বিশ্ব সমুদ্র পরিবহন বাণিজ্যের লড়াইয়ে টিকে থাকতে কন্টেইনারবাহী জাহাজের সংখ্যা বাড়ানোর কোনো বিকল্প দেখছেন না শিপিং ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:০৭:২৯ ৬৬ বার পঠিত