গণতন্ত্র আকাশ থেকে পড়ে না, বরং চর্চার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক৷
জার্মানির বন শহরের ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সেন্টারে ডয়চে ভেলে আয়োজিত গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের ১৭তম আসরে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
সোমবার ‘দ্য পাওয়ার অব ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের শক্তি’ শীর্ষক একটি প্লেনারি সেশনে অংশ নিয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বেয়ারবক৷ তিনি বলেন, ‘‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংকুচিত হচ্ছে৷ এর অন্যতম কারণ হলো, যুদ্ধ এবং সহিংসতায় সাংবাদিকেরা হামলার শিকার হচ্ছেন৷”
গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে আনালেনা বেয়ারবক বলেন, ‘‘আমি মনে করি, গণতন্ত্র কখনও শেষ হয় না৷ কারণ, গণতন্ত্র আসলে জীবনের মতো, আর জীবন কখনও ফুরায় না৷”
মানুষ যেমন প্রতিদিন একটু একটু করে শেখে, বেড়ে উঠে, গণতন্ত্রও অনেকটা সেইরকমবলে মনে করেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
তিনি আরো বলেন, ‘‘গণতন্ত্র কখনও আকাশ থেকে পড়ে না৷ গণতন্ত্রকে আমাদের রক্ষা করতে হয়৷”
প্লেনারি সেশনে আরো অংশ নিয়েছেন নোবেল বিজয়ী ফিলিপাইনসের সাংবাদিক মারিয়া রেসা৷
সারা বিশ্বে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারী সাংবাদিকেরা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ এজন্য ডনাল্ড ট্রাম্প এবং রদ্রিগো দুতের্তের মতো নেতাদের দায়ী করেন তিনি৷
মারিয়া রেসা বলেন, কোনো সমাজে ‘‘নারীরা যখন আক্রমণের শিকার হয়, তখন সেটা গণতন্ত্রের অবনমনের প্রথম ধাপ৷”
এর আাগে, সোমবার সকালে ১৭তম গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের উদ্বোধণ ঘোষণা করে ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পিটার লিমবুর্গ বলেন, ‘‘অন্ধকার সময়েও আশা আমাদের বাঁচিয়ে রাখে, কারণ, আশাহীন মানুষেরা সংকট সমাধানে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন না৷”
জার্মানির বন শহরের ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সেন্টারে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে দুই দিনের জিএমএফ সম্মেলন৷ এতে অংশ নিয়েছেন রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যম মালিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ একশটিরও বেশি দেশের দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ৷
শেয়ারিং সল্যুশন প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত দুই দিনের এই সম্মেলনে সাংবাদিকতা ও গণতন্ত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব, বিশ্বজুড়ে চলমান সংঘর্ষ নিয়ে রিপোর্ট, বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই, ইন্টারেনট সেন্সরশিপ মোকাবিলাসহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন সেশনে আলোচনা হয়েছে৷
পিটার লিমবুর্গ বলেন, ‘‘সাংবাদিকতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সহায়তা করতে পারলেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো মানুষের নেয়া উচিত৷ এআই সম্পর্কিত ভুল তথ্য যাচাইয়ের চাবিকাঠি মানুষের হাতে৷ সাংবাদিক হিসাবে জনগণে আস্থা ধরে রাখতে, নির্ভুল প্রতিবেদন নিশ্চিত করতে এবং গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে এআই-কে আমাদের দায়িত্বের সঙ্গে নিতে হবে৷”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন নর্থ রাইন-ভেস্টফালিয়ার মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট হেনড্রিক ভ্যুস্ট৷ ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘ডিজিটাইলেজশনের দ্রুত বিকাশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ দুটি দিকই আছে৷ নির্ভুল এবং ভুল সংবাদকে আলাদা করা অনেকের পক্ষে কঠিন হয়ে উঠছে৷”
এমন বাস্তবতায়, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জিএমএফ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গ্লোবাল সাউথে এআই-এর প্রভাব, সহিংসতাপূর্ণ এলাকায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ইস্যুতে বিভিন্ন সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদকর্মী, পেশাজীবীরা অংশ নিয়েছেন৷
বিশ্বের নানা প্রান্তের বিভিন্ন পেশার মানুষের আনাগোণায় মুখর ছিল গোটা কনফারেন্স সেন্টার৷
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫০:৫১ ৩০৬ বার পঠিত