বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, সিলেটে বন্যায় কৃষি খাতে যে ক্ষতি হয়েছে সে ক্ষতিপূরণে সহায়তা করবে সরকার। তিনি বলেন, সুরমা, কুশিয়ারা নদী খননের মাধ্যমে সিলেটবাসীকে বন্যা থেকে রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী বছর সিলেটবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে সিলেট পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
আজ সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরীর ৪২নং ওয়ার্ডে বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তা প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুধু ত্রাণ বিতরণই করতে চাই না। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। দেশের যেকোনো দুর্যোগ-দুঃসময়ে আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। শেখ হাসিনা তার লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তারই হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে।’
বিএনপির সমালোচনা করে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ক্ষমতার মসনদে বসে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লোটপাট করে দেশকে দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত করে বিএনপি। তাদের কর্তাব্যক্তিরা বিদেশে টাকা পাচার করে আলিশান অট্টালিকা নির্মাণসহ সম্পদের পাহাড় তৈরি করেছেন; কিন্তু কোনো দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি খালেদা জিয়া সরকার।
তিনি বলেন, বন্যায় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় নিয়মিত খাবার, পানি ও ওষুধ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এর আগে ২০২২ সালের বন্যায় সিলেটবাসীর পাশে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা ও সহমর্মিতা জানাতে তিনি নিজেও সিলেট সফর করেন। তারই নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ পুলিশ প্রশাসন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ায় এবং পানিবন্দিদের উদ্ধারে কাজ করে। আগামী বছর বন্যার কবল থেকে সিলেটকে রক্ষা করতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার।
সিলেট সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ সরকার মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সিলেটে বন্যা দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বন্যার খোঁজ-খবর রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সব সময় সিলেটবাসীর পাশে আছেন।
সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের পরিচালনায় এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামরান, ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৌফিক বকস, ৪২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রব।
এ সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের উদ্যোগে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলামে বন্যার্তদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতারা।
এর আগে বেলা ১১টায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সংগঠনের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনের পরিচালনায় নগরীর ২৪নং ওয়ার্ড তেররতন এলাকায় বন্যার্তদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণ সহায়তা তুলে দেন তারা।
সিলেটে আবার বৃষ্টি
টানা তিনদিন রোদের পর আজ সোমবার সকালে সিলেটে আবার বৃষ্টি হয়েছে। এতে কয়েকটি এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। আবহাওয়াবিদ সজীব হোসাইন জানান, গতকাল রোববার সকাল ৬টা থেকে আজ সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তবে আজ সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদী ও কুশিয়ারা নদীর চার পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। চারটি পয়েন্টের মধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপরে, কুশিয়ারা নদী আমলসিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপরে, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন ও আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, ২৮ জুন থেকে সিলেটে অতিভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এ জন্য আগাম সতর্ক থাকতে বলেছে সিলেট জেলা প্রশাসন। সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানিয়েছেন, এখনো জেলায় প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আছে ১৩ হাজার ১৫৪ জন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:২১:৩৬ ১০৭ বার পঠিত