ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারকে খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় গ্রেফতার হওয়া মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলীকে ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ বিষয়ে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এর আগে আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। তদন্তের স্বার্থে আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তিনি।
বুধবার (২৬ জুন) দুপুর থেকে খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে মোস্তাফিজুর ও ফয়সালকে গ্রেফতার করে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে ডিবির একাধিক টিম।
এদিকে এমপি আনার খুনের ঘটনায় জড়িত হিসেবে এখন পর্যন্ত যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল। এ দুজন খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী চরমপন্থী নেতা শিমুল ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। শিমুল ধরা পড়লেও এতদিন পলাতক ছিলেন তারা। শেষ পর্যন্ত তাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিবি কর্মকর্তাদের দাবি, গ্রেফতারকৃতরা এমপিকে খুনে সরাসরি অংশ নেন। ঘটনার ১১ দিন আগে তারা কলকাতায় গিয়ে উঠেন নিউমার্কেট এলাকার একটি হোটেলে। খুনের ছয় দিন পর ঢাকায় ফিরে যান আত্মগোপনে। বারবার অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকেন মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল। সর্বশেষ তারা নিজেদের হিন্দু ধর্মাবলম্বী পরিচয় দিয়ে আশ্রয় নেন একটি কালীমন্দিরে। সেখানে তারা হিন্দু পরিচয়ে আশ্রয় নিয়ে ২৩ দিন অবস্থান করেন।
ডিবি কর্মকর্তাদের ভাষ্য, আনারকে অচেতন করতে চেতনানাশক দিয়েছিলেন ফয়সাল। আর চেয়ারে বেঁধে রাখার কাজ করেন মোস্তাফিজুরসহ কয়েকজন। এ খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের দুজন আছেন ভারতে।
মোস্তাফিজুর ও ফয়সালকে ঢাকায় এনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আনার হত্যার ঘটনার তদন্ত করছিলাম। গতকাল শুনলাম এ দুই আসামি খাগড়াছড়ি বা সীতাকুণ্ডে অবস্থান করছেন। আমাদের টিম সেখানে পৌঁছে সাঁড়াশি অভিযানে যায়। অনেক উঁচু পাহাড়, সেখানে যাওয়া অনেক কঠিন ছিল। হেঁটে পৌঁছাতে ৭/৮ ঘণ্টা লাগত। পরে সেখান থেকে মোস্ট ওয়ানটেড দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গের বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে ওই বাড়ি থেকে বের হন তিনি। এরপর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি।
পাঁচ দিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় এমপি আনার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিন বারের এ সংসদ সদস্যের। ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়িয়ে পড়ে, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় সাঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ তার।
পুলিশের তথ্য মতে, সংসদ সদস্য আনার কলকাতা যান ১২ মে। সেখানে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। পরদিন তাকে প্রলুব্ধ করে নিউ টাউনের ওই ফ্ল্যাটে নেয়া হয়। তখন ওই ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিলেন শিলাস্তি, শিমুল, তানভীর, জিহাদ হাওলাদার, সিয়াম হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:২০:৫০ ৯৮ বার পঠিত