রড্রি, ফাবিয়ান রুইজ, নিকো উইলিয়ামস ও ডানি ওলমোর গোলে পিছিয়ে পড়েও জর্জিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্পেন। ব্লকবাস্টার কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেনের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক জার্মানি।
১৮ মিনিটে রবিন লে নরমান্ডের আত্মঘাতি গোলে জর্জিয়া এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কোলনে শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠেনি সারপ্রাইজ প্যাকেজ জর্জিয়া। এবারের প্রতিযোগিতা এই প্রথম গোল হজম করলো স্পেন। ম্যানচেস্টার সিডি মিডফিল্ডার রড্রির গোলে বিরতির ছয় মিনিট আগে সমতায় ফিরে স্পেন। ৫১ মিনিটে রুইজ স্পেনকে এগিয়ে দেন। এরপর উইলিয়ামস ও বদলী খেলোয়াড় ওলমোর গোলে লা রোজারা চতুর্থবারের মত ইউরো শিরোপা ঘরে তোলার পথে ভালভাবেই এগিয়ে রয়েছে।
রড্রি বলেছেন, ‘আমাদের এখনো অনেক জায়গায় উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। আজকের ম্যাচে কিছু কিছু সময় আমার যথেষ্ঠ ভাল খেলতে পারিনি। কিন্তু সার্বিকভাবে দলের পারফরমেন্সে আমি সন্তুষ্ট।’
আগামী শুক্রবার স্টুটগার্টে শেষ আটে স্পেনের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক জার্মানী। ২০০৮ সালের ইউরো ফাইনালেও এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। ঐ ম্যাচে ১-০ গোলে জয়ী হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সোনালী প্রজন্মের নতুন স্পেনের জন্ম হয়েছিল। কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ প্রসঙ্গে রড্রি আরো বলেন, ‘জার্মানি হয়তো ঘরের মাঠে খেলবে। কিন্তু আমরা মোটেই ভীত নই। এখানে আমরা জিততে এসেছি, শুধুমাত্র খেলতে নয়। এখনো পর্যন্ত নিজেদের ফুটবলীয় ইমেজটা ধরে রাখতে পারায় আমরা সবাই খুশী ও আত্মবিশ^াসী।’
লুইস ডি লা ফুয়েন্তের দল আরো একবার নিজেদের প্রমানের ও পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। বিশেষ করে কাল উজ্জীবিত জর্জিয়াকে তারা যেভাবে বিধ্বস্ত করেছে তাতে এই দলটিকে নিয়ে বাড়তি উদ্দীপনাই স্বাভাবিক। শেষ পর্যন্ত বড় ব্যবধানে জয়ী হওয়ায় শেষ আটে স্পেনকে কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখবে। যেভাবে স্পেন সুযোগ তৈরী করেছিল তাতে জয়ের ব্যবধান আরো বাড়তে পারতো। ১৬ বছর বয়সী উইঙ্গার লামিন ইয়ামাল বেশ কিছু গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছে। ইউরোতে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে গোলের রেকর্ডের জন্য ইয়ামালকে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
স্পেনের থেকে ৬৬ ধাপ পিছিয়ে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ৭৪তম স্থানে থাকা জর্জিয়া এবারই প্রথমবারের মত ইউরোতে খেলতে এসে নক আউট পর্বে খেলেছে। উইলি সাগনোলের দল এর আগে বাছাইপর্বে দুইবার স্পেনের কাছে হেরেছে। এর মধ্যে ঘরের মাঠে ৭-১ গোলে পরাজয়ের পর এ্যাওয়ে ম্যাচটিতে হেরেছিল ৩-১ ব্যবধানে।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পর্তুগালকে ২-০ গোলে হারিয়ে জর্জিয়া নিজেদের জাত চিনিয়েছে। যে কারনে স্পেন কোনভাবেই তাদের খাটো করে দেখেনি। জর্জিয়ান কোচ সাগনোল বলেছেন, ‘আমি এটা বলবো না যে আমরা হতাশ। কিন্তু আমরা কিছুটা হলেও দুঃখিত, কারন নক আউট পর্বের প্রথম ম্যাচেই হেরে গেছি। আমি নিশ্চিত একদিন আমরা ঠিকই অনুধাবন করতে পারবো আসলেই আমরা কি করেছি। আর সেই খুশী দ্রুতই ফিরে আসবে।’
জর্জিয়ার আক্রমনভাগকে এবারের আসরে সমৃদ্ধ করেছে কাভিচা কাভারেটসখেইলা ও জর্জেস মিকাওটাডে জুটি। এই জুটি যেকোন প্রতিপক্ষের জন্যই বিপদজনক হয়ে উঠেছিল। এছাড়া গোলবারে অতন্দ্র প্রহরীর মত খেলেছেন গিওর্গি মামাডাশভিলি। এখনো পর্যন্ত টুর্ণামেন্টের সেরা গোলরক্ষক হিসেবে তাকেই বিবেচনা করা হচ্ছে।
কালকেও তিনি পেড্রি ও ডানি কারভাহালের আক্রমন রুখে দিয়ে স্পেনকে এগিয়ে যেতে দেননি। বামদিক থেকে মিকাওটাডের পাস থেকে কাভারেটসখেলিয়া রাইট উইংয়ে বল বাড়িয়ে দেন ওকার কাকাবাজের দিকে। বক্সের ভিতর কাকাবাজের ক্রস লি নরমান্ড আটকাতে পারেননি। তার গায়ে বল লেগে তা জালে জড়ালে আত্মঘাতি গোলে পিছিয়ে পড়ে স্পেন। এবারের আসরে এ নিয়ে অষ্টম আত্মঘাতি গোলের ঘটনা ঘটলো।
পিছিয়ে পড়ে কাউন্টার এ্যাটাক থেকে বিপদজনক হয়ে ওঠে স্পেন। অথচ এই কাউন্টার এ্যাটাকাই ছিল জর্জিয়ার শক্তি। কিন্তু ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিজেদের করে নেয় স্পেন ও একের পর এক আক্রমনে মামাডাশভিলিকে পরীক্ষায় ফেলতে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় উইলিয়ামসের পাস থেকে রড্রির শট আটকাতে পারেননি ভ্যালেন্সিয়ার গোলরক্ষক মামাডাশভিলি।
বিরতির পর জর্জিয়া আর ঘুড়ে দাঁড়াতে পারেনি। যদিও শুরুতেই কাভারাটসখেলিয়া গোল প্রায় করেই ফেলেছিলেন। কিন্তু স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সাইমন পজিশন থেকে সড়ে আসলেও নাপোলি উইঙ্গারের শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ইয়ামালের ক্রসে রুইজের হেডে ৫১ মিনিটে এগিয়ে যায় স্পেন। ইয়ামাল নিজে গোল করতে না পারলেও আত্মঘাতি গোলের লজ্জায় পড়েছিলেন। কিন্তু অফসাইডের কারনে জর্জিয়ার ঐ গোলটি বাতিল হলে স্বস্তি ফিরে পান টিনএজার ইয়ামাল। ৭৫ মিনিটে রুইজের এ্যাসিস্টে উইলিয়ামস ব্যবধান ৩-১’এ নিয়ে যান। ম্যাচ শেষে সাত মিনিট আগে ওলমো দারুন ফিনিশিংয়ে দলের হয়ে চতুর্থ গোল করলে বড় ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সাবেক চ্যাম্পিয়নরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৫:১৫ ৬৩ বার পঠিত