নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন মানুষ হিসেবে উনি ভালো মানুষ ছিলেন। আমরা দিনের পর দিন অনেক মানুষকে হারিয়ে ফেলছি। সত্য কথা বলার, সৎ সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মানুষগুলোতে হারিয়ে ফেলছি।’
শুক্রবার (৫ জুন) বিকেলে শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুর রহমান স্মরণে আয়োজিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন৷
তিনি আরও বলেন, ‘বক্তারা বলেছেন এখন আমরা কথা বলি না, মেনে নিচ্ছি, আওয়াজ তুলি না। এটা সত্য ইদানিং আমরা থেমে গেছি। কিন্তু এটাও সত্য যখন প্রয়োজন, যেকোনো পরিস্থিতিতে এ শহরের মানুষ যে আওয়াজ তুলতে পারে তা কিন্তু আপনারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন। এই শহরের মানুষ সাহসী। আমি মনে করি, অন্যান্য জেলা থেকে নারায়ণগঞ্জের মানুষ অনেক বেশি সাহসী, সত্য কথা বলে। কিন্তু পরিবেশ, পরিস্থিতির কারণে কিছু দানবের কারণে, দানবীয় কর্মকান্ডের কারণে বিভিন্ন সময় নারায়ণগঞ্জের মানুষ হোচট খেয়েছে কিন্তু পথ ভুলে যায়নি। আবদুর রহমানের মত মানুষদের কারণে।’
আইভী বলেন, ‘রহমান কাকা ব্যক্তি জীবনে খুব ভালো মানুষ ছিলেন। উনার রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরেও উনার একটি আধ্যাত্মিক পরিচয় ছিল। উনি সুফিজমে বিশ্বাস করতেন। বিভিন্ন সময় এসব নিয়ে আমার কথা হতো। ২০০৪, ২০০৫ এর দিকে উনারা দাবি নিয়ে গেলেন, আলী আহম্মদ চুনকা পাঠাগারের সামনে কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের ভাস্কর্য করবেন। আমি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলাম অল্প জয়গায় কীভাবে করবে। কিন্তু নাছরোবান্দা চাপ সৃষ্টি করলো আমি না করতে পারিনি। আমি কখনোই সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের না বলতে পারি না। একমত পোষণ করে যাই অনেক ক্ষেত্রেই। যেটা আমার রাজনৈতিক দলের আদর্শের সাথে না গেলেও আমি অনেক সময় গণমানুষের স্বার্থে একমত পোষণ করে ফেলি।’
তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে, রাউজকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। তার সেই স্মরণীয় দিনগুলোর কথা না বললেই নাই। সবাই ছিলেন আন্দোলনের সাথে কিন্তু আমরা সেই জমি রক্ষা করতে পারিনি। সেই জমি এই শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা বিক্রি করে দিয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো নারায়ণগঞ্জবাসীদের অসম্মানিত করে আমাদের সকলের চোখে ধুলো দিয়ে মিথ্যাচার করে হাইকোর্টে মামলা থাকা সত্ত্বেও সেই জমি স্বার্থান্বেষীরা রাতারাতি বিক্রি করে দিয়েছে তাদের নিজেদের নামে। আমি জানি না, তারা আবার কিভাবে মানুষের সেবা করতে চায়, কল্যাণ করতে চায়।’
আব্দুর রহমানের পরিবারের পাশে সবসময় থাকবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনো প্রয়োজনে আমি আপনাদের পাশে আছি। বাবা হারানোর কষ্ট আমি জানি। তোমরা অনেক বড় হয়েছো। তোমাদের একটা পজিশনে রেখে গেছে। কিন্তু যাদের বাবা অল্প বয়সে রেখে যায় সে যত বড় নেতাই হোক না কেন কিছুটা হলেও বিপর্যস্ত অবস্থায় থাকে। সে পথ পাড়ি দিয়ে আজ এখানে আসা খুবই কষ্টকর জীবন ছিল। সবকিছু পাড়ি দিয়ে নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য আজকে আমি এখানে। শুধু আমি না, আমরা প্রত্যেকে তোমাদের সাথে আছি। কাকির শরীরও ভালো না। উনসত্তরের গণআন্দোলনে রহমান কাকার স্ত্রী আন্দোলন করেছেন। আমি অবাক হয়ে গেলাম, সেই সময়ে স্কুল থেকে বেড়িয়ে তারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। তাদের পরিবার সকল ভালো কাজের সাথে আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে।’
আইভী বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনেক ইতিহাস শুনেছি। আপনাদের সাহসে সাহসীত হই। আপনাদের সাথেই কাজ করতে চাই। আমার পাশে এসে দাঁড়ান রহমান কাকার মত। তাই আরও রহমান কাকা দরকার এই শহরে। কাকা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে কথা বলতে পারে। সত্য কথা বলাও ইবাদত। ধর্মের বিচার হবে না কর্মের বিচার হবে। সত্য বলার, প্রতিবাদ করার প্রবণতা আমাদের কমে যাচ্ছে। যতই ধর্ম-কর্ম করিনা কেন সত্য কথা যদি না বলি, মানুষের পাশে না দাঁড়াই তাহলে আমাদের সবকিছু বৃথা।’
জিয়াউল ইসলাম কাজলের সঞ্চালনায় এড. এবি সিদ্দিক এর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, নাগরিক কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি রফিউর রাব্বি, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী নুরউদ্দিন আহমেদ, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, সামাজিক আন্দোলনের দেলোয়ার হোসেন চুন্নু, মহিলা পরিষদের জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লক্ষ্মী চক্রবর্তী, কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি হাফিজুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, বাসদের আবু নাইম খান বিপ্লব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহমুদ হোসেন, ভোরের সাথীর নাসির উদ্দিন মন্টু, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শঙ্কর রায়, উদীচীর জেলা সভাপতি জাহিদুল হক দীপু, সমমনার সভাপতি সালাউদ্দিন আহমেদ, খেলাঘরের জেলা সভাপতি জহিরুল ইসলাম, শ্রুতির সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল ও প্রয়াত আব্দুর রহমানের সন্তান আহমেদুর রহমান তনু, আরিফুর রহমান অনু, তানহা রহমান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৫:১০ ১১১ বার পঠিত