কোটাবিরোধী আন্দোলনে মেধাবী এবং কম মেধাবী নাকি জেলাভিত্তিক যে আলোচনা করা হচ্ছে সেটা খুবই সাবজেক্টিভ বিষয় বলে মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, একটা নির্দিষ্ট মানের মেধা ধারণ না করে কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করা সম্ভব না।
রোববার (৭ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘এসএসসি-এইচএসসি সমমান পরীক্ষায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোটার প্রশ্নে যে কথা বলা হচ্ছে, মেধাবী এবং কম মেধাবী নাকি জেলাভিত্তিক সেটা তো খুবই সাবজেক্টিভ বিষয়। একটা নির্দিষ্ট মানের মেধা ধারণ না করে কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করা সম্ভব না, সেটা তো আমরা সবাই জানি। সে ক্ষেত্রে তার পরবর্তী ধাপ কীভাবে নির্ধারিত হবে, সেটা যেহেতু আদালতে পেন্ডিং আছে, সেটা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘যে কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মন্তব্য করতে পারেন। কিন্তু দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে আদালতের জন্য আবমাননাকর কোনো বক্তব্য দেয়া আমার পক্ষে অবশ্যই সম্ভব নয়। কেননা, কোটার বিষয়টি উচ্চ আদালতে এখনও বিচারাধীন। এটি নিয়ে রায় না আসা পর্যন্ত মন্তব্য করা আমার পক্ষে আদালত অবমাননার শামিল।’
মহিবুল হাসান বলেন, ‘আমাদের অনেকেই দেশের বাইরে অপপ্রচার করে যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ বা সংগঠন করতে নাকি নিষেধ, চ্যালেঞ্জ করে তারা সমালোচনা করতে চায়। আজকে যারাই আন্দোলন করছেন, এ আন্দোলনে তাদের যে একটা রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে স্টে (অবস্থান) করতে পারছেন, এটা কি প্রমাণ হয় না বাংলাদেশে রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্ন, বাকস্বাধীনতার চর্চার প্রশ্ন, আমাদের সরকারের কারও ওপরে কোনো বিধিনিষেধ নেই। মানুষের বাকস্বাধীনতা অবশ্যই আছে।’
তবে যে বিষয়টি নিয়ে এখানে আন্দোলন হচ্ছে বা একটা জায়গা সৃষ্টি হয়েছে বা সেটাকে বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হচ্ছে যে আমাদের সড়ক অবরোধ করার মাধ্যমে বা ব্লকেড কর্মসূচির মাধ্যমে। সেটা যেহেতু আমরা সরকারে আছি আইনের শাসনের প্রতি আমাদের অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে, বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
মহিবুল হাসান বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন এবং সেটার সমাধান না হওয়ার আগেই হঠাৎ করে আমি রাস্তায় নেমে আসলাম এবং রাস্তা-ঘাট সব ব্লক করে দিলাম, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রশ্ন থাকতে পারে এর পেছনে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র আছে কি না।’
স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করার জন্য অনেকেই অনেকভাবে অনেক জায়গায় উসকানি দেয় মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি এ বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলবো যে অনেক সময় জনপ্রিয় অনেক বিষয়কে পুঁজি করে ষড়যন্ত্রকারীরা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। তাই সেই ফাঁদে যাতে আমরা পা না দেই। প্রথমত এটি আদালতে বিচারাধীন আছে, আদালতের সিদ্ধান্তের পরে নির্বাহী বিভাগ সেটা বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা ফ্লেক্সিবিলিটি থাকে। সেটার জন্য অবশ্যই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে দেখেছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, সেই সময়টাতে কিন্তু নানানভাবে শুরু হয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীদের কর্মকাণ্ড। স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশে এমন একটা পরিস্থিতি করা যেখানে প্রগতিশীল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বারংবার এমন একটা অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। সে ধরনের প্রচেষ্টা হচ্ছে কি না সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’
এ সময় অনুষ্ঠানে ডিআরইউর সদস্যদের মধ্যে যাদের সন্তান ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এসএসসি এবং ২০২৩ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদের সংবর্ধনা ও বৃত্তি দেয়া হয়।
ডিআরইউর সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য এজেডএম মফিউদ্দিন শামীম। ডিআরইউর কল্যাণ সম্পাদক তানভীর আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৭:৪৩ ৬৪ বার পঠিত