সোমবার, ২৯ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশে ডিজিটাল ভূমি মূল্যায়ন নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক দক্ষিণ কোরিয়া, কনসেপ্ট পেপার উপস্থাপন

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » বাংলাদেশে ডিজিটাল ভূমি মূল্যায়ন নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক দক্ষিণ কোরিয়া, কনসেপ্ট পেপার উপস্থাপন
সোমবার, ২৯ জুলাই ২০২৪



বাংলাদেশে ডিজিটাল ভূমি মূল্যায়ন নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক দক্ষিণ কোরিয়া, কনসেপ্ট পেপার উপস্থাপন

ভূমি মন্ত্রণালয় আজ বাংলাদেশে ভূমি মূল্যায়ন (Land Valuation) পদ্ধতি উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্প ধারণাপত্র (Project Concept Paper – PCP) পর্যালোচনা করার জন্য এক সেমিনারের আয়োজন করে। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের ভূমি, অবকাঠামো ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠান কোরিয়া রিয়েল এস্টেট বোর্ড (আরইবি) এই কনসেপ্ট পেপার প্রস্তাব করে।

গত ১০ জুলাই দক্ষিণ কোরিয়ার ডিজিটাল সার্ভে বিশেষজ্ঞরা ভূমিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এলে তারা বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকায় ডিজিটাল ভূমি জরিপ পরিচালনার পাশাপাশি ভূমি মূল্যায়ন নিয়ে কাজ করার আগ্রহের কথা ভূমিমন্ত্রীকে জানায়। এ সময় ভূমি সচিব মোঃ খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জিয়াউদ্দীন আহমেদের সঞ্চালনায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আজকের সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিবৃন্দ। এছাড়া সরাসরি ও জুমের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন জেলার ভূমি প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ। কোরিয়া রিয়েল এস্টেট বোর্ডের ওভারসি প্রজেক্ট ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ড. বিজে কিং, জিউম্যাক্সসফটের সিইও ড. জে ইয়ং ইউসহ কোরিয়া ভার্চুয়ালি আরও উপস্থিত ছিলেন ল্যান্ড ভ্যালুয়েশন স্পেশিয়ালিস্ট ড. পার্ক এবং ড. ওয়ান ।

প্রসঙ্গত, ভূমি মূল্যায়ন হল সম্ভাব্য সব বিষয় বিবেচনা করে বাজারে জমির অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া, যা ক্রয়, বিক্রয়, করারোপণ, উন্নয়ন, বিনিয়োগ এবং পরিকল্পনার মতো বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ভূমি মূল্যায়ন ব্যক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি সংস্থাগুলির জন্য ন্যায্য লেনদেন এবং স্থিতিশীল পরিকল্পনা গ্রহণ নিশ্চিত করে।

মূলত ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন কর এবং খাসজমি বন্দোবস্ত সংক্রান্ত ভূমি মূল্যায়ন জটিলতা নিরসনের জন্য ডিজিটাল ভূমি মূল্যায়ন পদ্ধতি উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে কোরিয়া থেকে। বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিবন্ধন অধিদপ্তর মৌজা মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে জমির মূল্য এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিজ আওতাভুক্ত সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করলেও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উল্লিখিত তিন ক্ষেত্রে তা প্রায়ই পূর্ণাঙ্গ সহায়ক হয় না এবং এছাড়া প্রচলিত মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতিটিও ডিজিটাল নয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তায় দেশের ৬টি অঞ্চল, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, মানিকগঞ্জ পৌরসভা এবং ধামরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ইডিএলএমএস প্রকল্পের আওতায় চলমান বিডিএস কার্যক্রম শেষ হলে এর ডিজিটাল ক্যাডাস্ট্রাল ডাটাবেজের উপর ভিত্তি করে প্রাথমিক পর্যায়ে এই ছয় অঞ্চলের জন্য ডিজিটাল ভূমি মূল্যায়ন পদ্ধতি উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, কার্যকর ভূমি মূল্যয়ন ব্যবস্থা ভূমি সম্পর্কিত লেনদেনকেই সহজ করে তুলবে না, বরং কর সংগ্রহ, পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়ার দক্ষতাও বাড়িয়ে তুলবে। তাঁরা মনে করেন উন্নত ভূমি মূল্যায়ন কৌশল গ্রহণ ভূমি সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে ন্যায্য ও নির্ভরযোগ্য ভিত্তি প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।

সেমিনারের অন্যতম ফোকাস ছিল জমি মূল্যায়নে আধুনিক প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের একীকরণ। অংশগ্রহণকারীরা ভৌগলিক তথ্য ব্যবস্থা (জিআইএস), মেশিন লার্নিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ব্লকচেইন প্রযুক্তি, রিমোট সেন্সিং এবং ড্রোনের কার্যকর ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা প্রযুক্তিগুলোর সাহায্যে ভূমি মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে নির্ভুল, স্বচ্ছ এবং দক্ষ এবং নির্ভরযোগ্য করে গড়ে তোলার সম্ভাবনার কথা জানান। কোরিয়ার বিশেষজ্ঞগণ ভূমি মূল্যায়ন ব্যবস্থায় এ জাতীয় প্রযুক্তির সফল বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন। তাঁরা জানান, কোরিয়া ছাড়াও তানজানিয়ায় তাঁরা সফলতার সাথে ভূমি মূল্যায়ন ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট চাহিদা ও শর্ত বিবেচনায় বাংলাদেশেও অনুরূপ একটি সিস্টেম গড়ে তোলার ব্যাপারে তাঁরা এসময় দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সেমিনারে ভূমি মূল্যায়নের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত করা হয়। বিশেষজ্ঞরা সর্বোচ্চ এবং সর্বোত্তম ব্যবহার, প্রতিস্থাপন, সরবরাহ ও চাহিদা এবং প্রত্যাশা সহ জমির মূল্যায়নের নীতিগুলি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন। সেমিনারে ভূমি মূল্যায়নের চ্যালেঞ্জ যেমন তথ্যের প্রাপ্যতা এবং গুণমান, বাজারের গতিশীলতা এবং নৈতিক ও পেশাদার মান নিয়েও আলোচনা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২২:১৩:২৬   ৫৪ বার পঠিত