শনিবার, ১০ আগস্ট ২০২৪

কোরআনের যে আয়াত পাঠ করে ওমর (রা.) ইসলাম গ্রহণে ব্যাকুল হন

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » কোরআনের যে আয়াত পাঠ করে ওমর (রা.) ইসলাম গ্রহণে ব্যাকুল হন
শনিবার, ১০ আগস্ট ২০২৪



কোরআনের যে আয়াত পাঠ করে ওমর (রা.) ইসলাম গ্রহণে ব্যাকুল হন

ওমর (রা.) ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। যার ইসলাম গ্রহণে মুসলমানরা শক্তিশালী হয়েছিল। তিনি নবুয়তের ষষ্ঠ বছরে ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তার বয়স ছিল ২৭ বছর। হামজা (রা.)-এর মুসলমান হওয়ার তিন দিন পর তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হেদায়েতের জন্য দোয়া করেছিলেন। তার ইসলাম গ্রহণ মুসলমানদের সাহস ও উৎসাহের কারণ হয়েছিল। তিনি ছিলেন দৃঢ় ও সাহসী চরিত্রের অধিকারী। পাশাপাশি তিনি বিজ্ঞতা, সুবিচার ও আল্লাহভীরুতার জন্যও সুপরিচিত ছিলেন।

হজরত ওমর (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণ

মক্কার কাফেররা মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। প্রয়োজন ছিল শক্তিশালী প্রভাবসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের। তাই তো রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেছিলেন যে, হে আল্লাহ! আবু জাহল কিংবা ওমর বিন খাত্তাবের মধ্য থেকে যাকে আপনি পছন্দ করেন তার মাধ্যমে ইসলামকে সাহায্য করুন।

আবু তালিব রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলাম প্রচারে বাঁধা দিচ্ছিল না। তাই কুরাইশরা রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার ইচ্ছে করল।

কুরাইশরা তখন বললো, কে মুহাম্মাদকে হত্যা করতে পারবে? ওমর বললেন, আমি পারবো। উপস্থিত সবাই খুশি হয়ে ওমরকে উৎসাহ দিল।

দুপুরবেলায় তরবারি নিয়ে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিদের খোঁজে ওমর বের হলেন। তখন রসুলের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন আবু বকর, হামজা ও আলি (রা.)। ছায়ার মতো তারা সব সময় রসুলের সঙ্গে থাকতেন।

ওমর বেরিয়ে পড়েন হত্যার উদ্দেশে। পথে দেখা হয় নুয়াইম ইবনে আব্দুল্লাহর সঙ্গে। সে ওমরকে তরবারি হাতে নিয়ে যেতে দেখে বললো, কোথায় যাচ্ছো ওমর?

ওমর বললেন, আমি মুহাম্মাদকে খুঁজছি। সে কুরাইশদের বিভক্ত করে ফেলেছে। সে আমাদের দেব-দেবীকে তাচ্ছিল্য করে। আমি তাকে হত্যা করবো।

নুআইম বিন আব্দুল্লাহ বললেন, ওমর, তুমি তো ভুল পথে যাচ্ছো? আল্লাহর কসম! তুমি বোকা হয়ে গেছো। নিজেকে বিপদে ফেলছো। তোমার ভুলের কারণে বনু আদি ধ্বংস হয়ে যাবে। তুমি কি মনে করো যে, মুহাম্মাদকে হত্যা করার পর বনু আবদে মানাফ তোমাকে ছেড়ে দিবে?

ওমর তখন বললো, আমার মনে হয় তুমিও ধর্মত্যাগ করেছ। যদি আমি তোমার ধর্মত্যাগ করার ব্যাপারে জানতে পারি, তাহলে প্রথমে তোমাকে হত্যা করবো।

নুআইম বিন আব্দুল্লাহ বুঝতে পারলেন যে, ওমরকে এভাবে থামানো যাবে না। তাই তিনি বললেন, তোমার বোন এবং তোমার ভগ্নিপতি মুসলমান হয়ে গেছেন।

তারা দেব-দেবীর উপসনা ছেড়ে এক আল্লাহর ইবাদত শুরু করেছেন। তুমি তো ভুল পথে আছো।

বোনের বাড়িতে হামলা

বোনের বাড়িতে হাজির হলেন ওমর। দরজায় করাঘাত করার পর ভেতর থেকে বললো, কে? ওমর বললেন, আমি খাত্তাবের পুত্র। দরজা খোল। তার বোন এবং ভগ্নিপতি একটি কাগজে কুরআন পড়ছিলেন। তারা যখন বুঝতে পারেন যে, ওমর এসেছে। তখন তারা উক্ত কাগজটি লুকিয়ে রাখলেন।

ওমর ঘরে ঢুকেই বললেন, তোমরা কি পড়ছিলে? আমি বাড়িতে প্রবেশের সময় শুনতে পেয়েছি।

তারা তখন বললেন, আমরা তো নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলাম। ওমর তখন উত্তেজিত হয়ে বললেন, সম্ভবত তোমরা ধর্ম পরিবর্তন করেছো।

তখন ওমরের ভগ্নিপতি বললেন, হে ওমর! যদি আপনার ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মে সত্য লুকিয়ে থাকে তাহলে কি হবে?

ওমর তখন তার ভগ্নিপতি সাঈদের উপর আক্রমণ করেন। ওমর ছিলেন প্রচণ্ড শক্তিশালী। তিনি সাঈদকে ধরাশায়ী করে ফেললেন।

ওমরের বোন স্বামীর বেহাল অবস্থা দেখে স্বামীকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসলেন। কিন্তু ওমর তাকে ঢাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলেন।

আঘাত লেগে ফাতিমা বিন খাত্তাব (রা.)-এর মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। ফাতিমা তখন রেগে চিৎকার করে বললেন, হে আল্লাহর শত্রু! আমরা একমাত্র মহান আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি বলে কি তুমি আমাদের উপর অত্যাচার করছো? ওমর বললেন, হ্যাঁ।

তখন ফাতিমা (রা.) বললেন, তাহলে তোমার যা ইচ্ছা করো। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনা ইলাহ নেই। আর মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসুল।

ওমর এ কথা শুনে অনুতপ্ত হলেন। তিনি তার ভগ্নিপতিকে ছেড়ে দিলেন। তখন বললেন, তোমরা যেই কাগজ থেকে পড়ছিলে তা আমাকে দেখাও।

ফাতিমা বিন খাত্তাব বললেন, তুমি অপবিত্র হয়ে আছো। যারা পাক-পবিত্র, তারাই সেটা ধরতে পারবে।

ওমরের কোরআন পড়া

ওমর তখন বাইরে থেকে হাতমুখ ধুয়ে আসলেন। এরপর বোনের হাত থেকে কাগজটি নিয়ে পড়তে লাগলেন,

طٰهٰ. مَاۤ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡکَ الۡقُرۡاٰنَ لِتَشۡقٰۤی. اِلَّا تَذۡکِرَۃً لِّمَنۡ یَّخۡشٰی. تَنۡزِیۡلًا مِّمَّنۡ خَلَقَ الۡاَرۡضَ وَ السَّمٰوٰتِ الۡعُلٰی اَلرَّحۡمٰنُ عَلَی الۡعَرۡشِ اسۡتَوٰی. لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا بَیۡنَهُمَا وَ مَا تَحۡتَ الثَّرٰی. وَ اِنۡ تَجۡهَرۡ بِالۡقَوۡلِ فَاِنَّهٗ یَعۡلَمُ السِّرَّ وَ اَخۡفٰی. اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ؕ لَهُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی

অর্থ: ত-হা-। তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি। বরং যে আল্লাহকে ভয় করে তার জন্য উপদেশ হিসেবে অবতীর্ণ করেছি। যিনি পৃথিবী ও সুউচ্চ আকাশ সৃষ্টি করেছেন তার নিকট হতে এই কুরআন নাযিল হয়েছে। পরম দয়াময় আল্লাহ আরশে সমাসীন আছেন। যা অবস্থিত আসমানসমূহ ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানে ও ভূগর্ভে আর এই সকল কিছু শুধুমাত্র তা তারই। আর যদি তুমি উচ্চস্বরে কথা বল তবে তিনি গোপন ও অতি গোপন বিষয় জানেন। আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই। তার জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নামসমূহ। (সুরা তহা, আয়াত ১-৯)

ওমর ইসলাম সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেন

উপরোক্ত আয়াত তেলওয়াতের পর ওমর বললেন, এ জিনিষ থেকেই কি কুরাইশরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে? এরপর তিনি আরও তেলওয়াত করলেন,

اِنَّنِیۡۤ اَنَا اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدۡنِیۡ ۙ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ لِذِکۡرِیۡ. اِنَّ السَّاعَۃَ اٰتِیَۃٌ اَکَادُ اُخۡفِیۡهَا لِتُجۡزٰی کُلُّ نَفۡسٍۭ بِمَا تَسۡعٰی. فَلَا یَصُدَّنَّکَ عَنۡهَا مَنۡ لَّا یُؤۡمِنُ بِهَا وَ اتَّبَعَ هَوٰىهُ فَتَرۡدٰی

অর্থ: নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর’। ‘নিশ্চয় কিয়ামত আসবে; আমি তা গোপন রাখতে চাই যাতে প্রত্যেককে স্বীয় চেষ্টা-সাধনা অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া যায়’। অতএব যে ব্যক্তি তার প্রতি ঈমান রাখে না এবং স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে সে যেন কিছুতেই ঈমান আনয়নে তোমাকে বাধা দিতে না পারে; অন্যথায় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।

ওমর এ আয়াত পড়ার পর মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ওমর নবীজির কাছে দারুল আরকামে উপস্থিত হলেন। তার হাতে তখনো তলোয়ার ছিল। ওমর দরজায় করাঘাত করার পর সাহাবারা দরজা খুলতে ইতস্ততবোধ করছিল।

তখন হামজা (রা.) বলেন, তোমাদের কি হয়েছে? তাকে আসতে দাও। যদি ভালো উদ্দেশ্যে আসে, তাহলে তো ভালোই। অন্যথায় তার তরবারি দিয়ে তাকেই হত্যা করা হবে।

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওমরকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, হে খাত্তাবের পুত্র! কোন জিনিস তোমাকে এখানে টেনে আনলো?

ওমর বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আমি আপনার প্রতি ঈমান এনেছি। আর আপনি যা এনেছেন, তার প্রতিও ঈমান এনেছি। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশীতে আল্লাহু আকবার বলে তাকবির দিলেন সাহাবারাও অত্যন্ত খুশী হলেন। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দোয়া কবুল হলো।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ওমর মুসলমান হওয়ায় আমরা গর্ববোধ করতাম। কারণ, তিনি মুসলমান হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা কাবা ঘর তওয়াফ বা কাবায় নামাজ পড়তে পারছিলাম না। এরপর থেকে আমরা কাবা ঘর তওয়াফ করতাম এবং নামাজ পড়তাম।

বাংলাদেশ সময়: ১২:০৩:৩৭   ৫৫ বার পঠিত