শরীরকে চাঙ্গা রাখতে ডিম খাওয়া জরুরি। কিন্তু দৈনিক কতগুলি ডিম খাওয়া যেতে পারে সেই বিষয়ে অনেকেরই জ্ঞান নেই। তাই তো এই প্রশ্নটা বারে বারে উঠে আসে, একটার বেশি ডিম খেলে কি কোনো সমস্যা হতে পারে? চলুন জানা যাক এই বিষয়ে।
কয়েক বছর আগে পর্যন্ত মনে করা হতো বেশি ডিম খাওয়া শরীরের পক্ষে একেবারেই ভালো নয়। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল রয়েছে, যা শরীরের নানাভাবে ক্ষতি করে থাকে। কিন্তু এই ধারণা ইতিমধ্যেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। উল্টো চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিদিন একটা নয় কম করে তিনটা ডিম খান। দেখবেন একাধিক রোগের প্রকোপ একেবারে কমে যাবে। আসলে এতে উপস্থিত একাধিক পুষ্টিকর উপাদান এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কিন্তু সেই প্রশ্নটা রয়েই গেল। দিনে কয়টা ডিম খাওয়া যেতে পারে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে প্রদিন তিনটা ডিম খেলে ক্ষতি নেই একজন স্বাভাবিক মানুষের।
১. শরীরে কখনও পুষ্টির অভাব হয় না: ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ, ই, বি৬, বি১২, থিয়ামিন, রিবোফ্লেবিন ফলেট, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম প্রভৃতি উপাদান, যা শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. শরীরে ভালো কোলেস্টরেলের মাত্র বৃদ্ধি পায়: এক সময় মনে করা হত ডিম খেলে শরীরে বাজে কোলস্টেরেলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। একথা ঠিক যে ডিম শরীরে প্রবেশ করলে কোলেস্টেরেল বাড়ে, কিন্তু সেটা খারাপ কোলেস্টেরেল নয়, ভালো কোলেস্টেরেল বা এইচ ডি এল। প্রসঙ্গত, শরীরে ভালো কোলেস্টেরেলের মাত্রা যত বৃদ্ধি পাবে, তত শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
৩. কোলিনের যোগান ঠিক রাখে: মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্মৃতিশক্তির উন্নতিতে কোলিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ডিমের মধ্যে। এবার বুঝতে পারছেন তো প্রতিদিন তিনটা করে ডিম খেলে কতটা উপকার পাওয়া যায়।
৪. দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়: ডিমে রয়েছে লুটিন, জিজেনন্থিন, ক্যারোটিনয়েড ভিটামিন। এই সবগুলো উপাদানই দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমনকি প্রবীণদের নানাবিধ চোখের সমস্যা কমাতেও ডিম দারুণভাবে সহায়তা করে। সেই কারণেই তো ৮-৮০ এর প্রতিদিন ডিম খাওয়াটা এতটা জরুরি।
৫. পেশির ক্ষমতা বাড়ায়: প্রায় মাংসের সমান প্রোটিন থাকে ডিমে। তাই তো প্রতিদিন দুটো করে ডিমের কুসুম খেলে পেশির স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ফলে শরীরের গঠন আরও ভালো হতে শুরু করে।
৬. হাড় আরও শক্তপোক্ত হয়: হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ক্যালসিয়ামের কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। আর হাড়ে যাতে ঠিক মতো ক্যালসিয়াম শোষিত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে ভিটামিন-ডি। আর এই দুটি উপাদানই ডিমে প্রচুর মাত্রায় রয়েছে। এজন্যই চিকিৎসকরা প্রতিদিন তিনটা করে ডিম খাওয়ার পক্ষে মত দেন।
৭. ওজন হ্রাসে সাহায্য করে: একথা সকলেরই জানা আছে যে খাবার যত কম খাওয়া যাবে, ওজন তত তাড়াতাড়ি কমবে। তাই তো ব্রেকফাস্টে ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সকাল সকাল ডিম খেলে পেটটা এতটাই ভরে যায় যে সারাদিন কম কম খাবার খেতে ইচ্ছা করে। ফলে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
৮. স্ট্রোকের আশঙ্কা কমায়: একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে প্রতিদিন ডিম খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি কম পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট খাওয়া যায়, তাহলে স্ট্রোকের আশঙ্কা অনেকাংশেই হ্রাস পায়। তবে ডায়াবেটিকস রোগীরা ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করবেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিতে ভুলবেন না।
৯. অ্যামাইনো অ্যাসিডে পরিপূর্ণ: শরীর যাতে ঠিক মতো প্রোটিনকে কাজে লাগাতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখে অ্যামাইনো অ্যাসিড। আর এই উপাদানটি প্রচুর মাত্রায় রয়েছে ডিমে। তাই তো প্রতিদিন ডিম খেলে প্রোটিনের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই থাকে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩০:১৩ ৭৪ বার পঠিত