শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪

শীতের আগাম সবজির লাগামহীন বাজার

প্রথম পাতা » কৃষি ও বাণিজ্য » শীতের আগাম সবজির লাগামহীন বাজার
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪



শীতের আগাম সবজির লাগামহীন বাজার

শীতকাল আসতে এখনও ঢের দেরি। তবুও বাজারে চলে এসেছে বেশিরভাগ শীতের সবজি। রাজধানীর বাজারগুলোতে শীতের আগাম সবজির পসরা সাজিয়েছে বসেছেন দোকানিরা। তবে কোনটার দামই নাগালে নেই। এ উত্তাপে বাড়ছে অন্যান্য সবজির দামও।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর এবং রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট ও হাতিরপুল কাঁচাবাজারসহ বেশ কটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারগুলো শাক-সবজিতে ভরপুর। বেগুন, শসা, পটোল, বরবটি, লতি, ঢ্যাঁড়শ, কাঁকরোল, পেঁপে, করলা — কী নেই! আছে শীতকালীন শিম, গাজর, মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপিও।

তবে এতসব সবজির সমারোহের পরও দাম ছাড়ছেন না ব্যবসায়ীরা। নাগালের মধ্যে নেই কোনো সবজিই। এতে নাজেহাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। ব্যবসায়ীদের দাবি, সম্প্রতি বন্যায় ও টানা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত। এতে বাজারে সরবরাহ কম থাকায় সবজির দাম চড়া।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, বৃষ্টি ও বন্যার কারণে বর্তমানে সবজির দাম বেড়েছে। সপ্তাহে ব্যবধানে কোনও কোনও সবজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সবজি কিনছেন ক্রেতারা।

কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের সবজি বিক্রেতা উজ্জ্বল বলেন, প্রতি বছর এ সময়টায় সবজির দাম চড়া থাকে। তবে এবার সাম্প্রতিক বন্যা ও বৃষ্টিতে দাম একটু বেশিই চড়া। শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। নভেম্বরের শুরু থেকে দাম কমতে শুরু করবে।

বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ১০০-১২০ টাকা, করলা ৭০-৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০-৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, লতি ৬০-৮০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা ও পটোল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ২৫-৩০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, শিম ২৫০-৩০০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়।

এছাড়া, প্রতি কেজি ধনেপাতা ৪০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা ও আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। আর প্রতি পিস ফুলকপি ৭০-৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৮০-১০০ টাকা ও প্রতি পিস লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা।

দামে পিছিয়ে নেই শাকের বাজারও। লালশাকের আঁটি ২০ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ২০ টাকা, ডাঁটাশাক ২০ টাকা, কলমিশাক ১০-১৫ টাকা ও পালংশাক ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঊর্ধ্বমুখী শাকের বাজারও।

ক্রেতারা বলছেন, সরকার বদলেছে, তবে বাজার সিন্ডিকেট একই আছে। আর সিন্ডিকেটের কবলেই ভোক্তার পকেট জিম্মি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আসা সামাদ বলেন, বাজারে সবজি রয়েছে ভরপুর। শীতকালীন সবজিও চলে এসেছে। তবু কোন যুক্তিতে দাম বাড়ছে? এটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের কাছে জিম্মি সাধারণ ভোক্তারা।

আরেক ক্রেতা মাহমুদা জানান, কখনও বন্যা-বৃষ্টি, কখনও হরতাল-অবরোধ, আবার কখনও গরম, ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর যুক্তি তৈরি থাকে সবসময়ই। সারা বছরই পকেট কাটা হচ্ছে ভোক্তাদের। দেখেও যেন দেখার নেই কেউ। তাই এগুলো বলে আর লাভ কী!

কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী হাসান আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মাছ-মাংস খাওয়া তো আগেই কমিয়েছি। এখন সবজির বাজারও হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আমরা সাধারণ মানুষ কী খেয়ে বাঁচব!’

এদিকে, বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার জানান, সম্প্রতি বন্যায় ও টানা বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বাজারে কমেছে সরবরাহ। তাছাড়া শীতকালীন আগাম সবজি মাত্র বাজারে উঠতে শুরু করেছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তাই দামও তুলনামূলক বাড়তি।

বাংলাদেশ সময়: ১২:১৫:১৪   ৮২ বার পঠিত