বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, পতিত স্বৈরাচার কিন্তু বসে নেই। পতিত স্বৈরাচার যেখানে আশ্রয় প্রশ্রয় পাচ্ছেন তারাও কিন্তু তার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। ভারতের হাইকমিশনার বলেছেন- শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এটা তো কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে তার বিষয়টি চলে আসতে পারে। শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া মানে খুনি ও সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেওয়া। ভারতীয় হাইকমিশন থেকে যে বক্তব্য তাতে ফুটে উঠেছে, সেটি বিগ ব্রাদারসুলভ।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তথা রজতজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে জিয়ার মাজারে জিয়ারত করেন বিএনপির নেতারা।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের মতো একটি দেশ, যেখানে বিভিন্ন স্বৈরাচার সরকারের অধীনে মানুষের গড় আয়ু বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাড়েনি। সেখানে ২৫ বছর একটি সংগঠনের টিকে থাকা সত্যিকারভাবে নেতৃত্বের যোগ্যতা ও দক্ষতার কারণে, যার প্রেসিডেন্ট তারেক রহমান।
নির্বাহী পরিচালক হলেন অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার।
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, একটি মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন তারেক রহমান। দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। ফ্যাসিবাদী আমলে যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যখনই মানুষ বিপদে পড়েছে, তখনই জেডআরএফ ছুটে গিয়েছে। সম্প্রতি বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সংগঠনের নেতারা ছুটে যান।
সারা দেশে এক হিংস্র আক্রমণে যেসব মানুষ হাত-পা কিংবা চোখ হারিয়েছেন, তাদের কৃত্রিম হাত, পা সংযোজন করেছে জেডআরএফ। মনুষ্যত্ব ও মানবতার সেবায় জড়িত জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন। তারেক রহমানের নির্দেশে সারা দেশে মানবসেবা করে যাচ্ছে ফাউন্ডেশন।
তিনি বলেন, আমরা এখনো স্বৈরাচারের হিংস্র থাবা থেকে বিমুক্ত হতে পারছি না। বৃহস্পতিবার হঠাৎ সারা দেশে ৫০/৬০ জেলায় বিদ্যুৎ শাটডাউন করা হলো? এরা কারা? আমরা বলেছি দোসসরার কিন্তু এখনো আছে। এরা অন্তর্ঘাত করবে। আরইবি বা পল্লী বিদ্যুৎ সংস্থা জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গ্রামে গঞ্জে আলো ছড়িয়ে দেওয়া এবং চাষবাসের জন্য তথা গোটা জাতিকে আলোকিত করার জন্য এটি গঠিত হয়েছিল। সেজন্য শেখ হাসিনার সময় থেকেই এই সংস্থার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। কারণ তারা এই নামটি রাখতে চান না। অন্য কোনো নাম দিতে চায়, যা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এ বিষয়ে আগে থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া গেলে বিদ্যুৎ শাটডাউন করত না। এটা তো নাশকতা। দাবি দাওয়া থাকলে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে পারতো! তাহলে শেখ হাসিনার সময় বন্ধ করেনি কেন? কারণ তারা পতিত স্বৈরাচারের প্রেতাত্মা। এরা ভৌতিক অস্তিত্ব নিয়ে ভেতরে ঢুকে আছে। আমি এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই। সরকারকে বলব- আরো সক্রিয় হয়ে কাজ করুন। নাহলে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মূল্য কী? আমরা যে গণতন্ত্রের পথে যাচ্ছি সেটা বাধাগ্রস্ত হবে।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, আপনারা দ্রুত নির্বাচন দিন। আমার ভোট যাতে আমি দিতে পারি। আপনারা বলছেন- আনুপাতিক ভোটের কথা। বিশ্বের অনেক দেশে আনুপাতিক ভোট নিতে পারেনি। কিছু কিছু ক্ষুদ্র দল এই পদ্ধতি নিয়ে কথা বলছে। তারা মনে করছে তারা সুবিধা পেয়ে যাবে। আসলে এটা বলা হচ্ছে কাউকে সুযোগ দেওয়ার জন্য। এটা করতে যাবেন না। না হলে ড. ইউনূস সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে। আপনার নির্বাচন দিন।
রিজভী বলেন, গণতান্ত্রিক শক্তি আরামে আছি, সেটা বলা যাবে না। গোপালগঞ্জকে তারা (আওয়ামী লীগ) মাফিয়াতন্ত্রের ঘাঁটি বানাতে যায়, যাতে সেখান থেকে তারা বায়তুল মোকাররম মসজিদ দখল করতে পারে। কোর্ট দখল করতে আসে। কেউ সেদিক (গোপালগঞ্জ) দিয়ে গেলে হত্যা করতে পারে। যেমনটি তারা স্বেচ্ছাসেবক দলের দিদারকে হত্যা করেছে। নরসিংদীতে জুনায়েদকে হত্যা করেছে। সুতরাং গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, যারা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অনেক কমিশনার রয়েছে। আর কোনো হিংস্র দানব শক্তির আবির্ভাব চাই না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেডআরএফের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, জেডআরএফের শামীমুর রহমান শামীম, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, ডা. একেএম মাসুদ আখতার জীতু, বিএনপির আমিনুল ইসলাম ও যুবদলের মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২২:১৬:৫৬ ৩৮ বার পঠিত