আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ বা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এসব বিষয়ে তার সরকার কোনো পদক্ষেপ নিতে চায় না।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা বলেন। ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে দেয়া এই সাক্ষাৎকারটি সোমবার (১৮ নভেম্বর) দ্য হিন্দুর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে করা প্রশ্নে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছাকে সম্মান করছি। এরই মধ্যে বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে যে, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে। সুতরাং দেশের একটি বড় দলের মতামতকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না।’
তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আপত্তি আছে কি না এমন প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি রাজনীতিবিদদের আকাঙক্ষা বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করছি।’
হিন্দুর সাংবাদিক জানতে চান, ৫ আগস্টের ঘটনা কীভাবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলছে? এটা কি একটা ধাক্কা হিসেবে এসেছে?
জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এটা কেন হবে? বাংলাদেশ এমন একটি শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে, যেখানে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, অনেকে নিহত হয়েছেন, অনেককে গুম করা হয়েছে, অনেক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের এই মুক্তিকে বন্ধুদেশ হিসেবে ভারতের উদযাপন করা উচিত। অনেক রাষ্ট্র যেমনটি করেছে, তেমন ভারতেরও আমাদের তরুণদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত এবং একসঙ্গে উদযাপন করা উচিত।
শেখ হাসিনার ভারত থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশে আন্দোলন করার আহ্বান জানাচ্ছেন, যা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ওপর প্রভাব ফেলছে।’
তিনি সতর্ক করেন, যদি ভারত কোনো রাজনৈতিক কারণে তাকে আশ্রয় দেয়, এটি ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, আমরা তাকে ফিরিয়ে আনতে সব আইনি উপায় অবলম্বন করব।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনামূলক মন্তব্যের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘যখন তিনি বাস্তব পরিস্থিতি দেখবেন, তখন তিনি অবাক হবেন। আমাদের অর্থনীতি ভালো হলে, সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আমাদের সরকার মানবাধিকার রক্ষা এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের একত্রে এগিয়ে যেতে হবে।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা শুধু একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নই; আমাদের কাজ হলো বাংলাদেশকে সংস্কার করা। নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন হোক, তবে সাংবিধানিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য সময় প্রয়োজন।’
সাক্ষাৎকারে খেলাপি ঋণসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারের নেয়া উদ্যোগ ও সেগুলোর সফলতার কথা তুলে ধরেন ড. ইউনূস।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৮:৩২ ১১ বার পঠিত