মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

পৃথিবীর সব চাইতে পরিচ্ছন্ন ৫ মুসলিম দেশ

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » পৃথিবীর সব চাইতে পরিচ্ছন্ন ৫ মুসলিম দেশ
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪



পৃথিবীর সব চাইতে পরিচ্ছন্ন ৫ মুসলিম দেশ

পরিচ্ছন্নতা ইসলামের একটি অপরিহার্য অংশ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ’ (মুসলিম, ২২৩)। এই হাদিসের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, ইসলামে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব কতখানি। কোরআনেও আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে ভালোবাসেন’ (সুরা বাকারা ২২২)।

তাই মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে এ শিক্ষার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই। চলুন জেনে নিই পৃথিবীর পাঁচটি পরিচ্ছন্ন মুসলিম দেশের নাম, যারা তাদের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত

পরিচ্ছন্নতা ও আধুনিকতার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিশ্বের পরিচ্ছন্ন শহরগুলোর মধ্যে দুবাই ও আবুধাবি শীর্ষস্থানীয়। দেশটির উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, স্থাপত্যের নান্দনিকতা এবং জনসচেতনতা পরিচ্ছন্নতাকে নিশ্চিত করেছে।

ইসলামের শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে এখানে কঠোরভাবে পরিচ্ছন্নতা আইন প্রয়োগ করা হয়। রাস্তাঘাট, মসজিদ, এবং পাবলিক স্পেসগুলোতে অদৃশ্য এক শৃঙ্খলা দেখা যায়, যা দেশটিকে গ্লোবাল পরিচ্ছন্ন দেশগুলোর তালিকায় উপরের দিকে রেখেছে।

মালদ্বীপ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মালদ্বীপ পরিচ্ছন্নতার জন্যও বিশ্বজুড়ে খ্যাত। এখানকার সাদা বালুর সমুদ্র সৈকত এবং টলটলে পরিষ্কার পানির জন্য মালদ্বীপ পরিচ্ছন্নতার এক উদাহরণ। দেশটির অর্থনীতি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় সরকার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে থাকে।
মালদ্বীপের মুসলিম জনগণ ইসলামের শিক্ষা মেনে পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতায় অবদান রাখে।

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়া মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম পরিচ্ছন্ন দেশ। দেশের প্রতিটি শহর, বিশেষ করে কুয়ালালামপুর, পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে অত্যন্ত উন্নত।
মালয়েশিয়ার সরকার জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং পরিবেশবান্ধব আইন বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। মসজিদ থেকে শুরু করে গণপরিবহন, সব জায়গায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বিরাজমান।

তুরস্ক

ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটিয়ে তুরস্ক পরিচ্ছন্নতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। বিশেষ করে ইস্তাম্বুল, যেখানে ঐতিহাসিক মসজিদ ও স্থানগুলো অত্যন্ত যত্নসহকারে পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। তুরস্কে মসজিদে প্রবেশের আগে অজু করার ব্যবস্থা এবং স্থানীয়দের পরিচ্ছন্নতা চর্চা ইসলামি শিক্ষার সৌন্দর্যকে তুলে ধরে।

কাতার

কাতার তার পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য পরিচিত। দেশের রাজধানী দোহা পরিচ্ছন্ন শহরের তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
কাতারে নাগরিকদের জন্য কঠোর পরিচ্ছন্নতা আইন রয়েছে। রাস্তা, মসজিদ, ও অন্যান্য পাবলিক স্থানে সর্বদা পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা হয়। এটি দেশটির ইসলামি মূল্যবোধেরই প্রতিফলন।

ইসলাম পরিচ্ছন্নতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, তুমি তোমার পোশাক পবিত্র রাখো (সূরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৪)। মসজিদে নামাজ পড়ার আগে অজু করার বিধান, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশনা, এবং নাপাক জিনিস থেকে দূরে থাকার শিক্ষা—এসবই পরিচ্ছন্নতার ওপর ইসলামি গুরুত্ব তুলে ধরে।
রসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকেই ভালোবাসেন। (তিরমিজি, ২৭৯৯)।

পরিচ্ছন্নতা শুধু একটি ধর্মীয় আদর্শ নয়, এটি মানুষের জীবনে শান্তি এবং সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এই শিক্ষাকে তাদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে অন্তর্ভুক্ত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, এবং কাতার—এই পাঁচটি দেশ পরিচ্ছন্নতায় তাদের উজ্জ্বল অবস্থান দিয়ে পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে দিচ্ছে যে ইসলামের শিক্ষা কীভাবে একটি জাতির উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো নিজের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ইসলামের এ মহান শিক্ষাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা।

বাংলাদেশ সময়: ১১:১২:০৮   ১২ বার পঠিত