নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীরা থাকতে কেউ হিন্দুর ধনসম্পদ ও জানমালের ক্ষতি করতে পারবে না বলে বিশৃঙ্খলাকারীদের হুঁশিয়ার করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন৷
শনিবার (৩০ নভেম্বর) ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন৷
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমরা হিন্দু মুসলমান একসাথে বসবাস করেছি৷ এখনো আমরা সম্প্রতি বজায় রেখে একসাথেই বসবাস করছি। স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় আসলে হিন্দু সম্প্রদায়ের যারা ব্যবসায়ী আছেন বিভিন্ন অজুহাতে আপনাদের থেকে চাঁদা নেওয়া হয়, অনেকভাবে আপনাদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়৷ একমাত্র বিএনপি যখন সুযোগ পায় আপনাদেরকে সেই চাপ প্রয়োগ করে না। চাঁদা চায় না। আপনারা সংযত থাকেন ভালো থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদেরকে অনুরোধ জানাবো, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের বা স্বৈরাচারীর উসকানিতে কোনো অবস্থায় নারায়ণগঞ্জে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না। একটা হিন্দুর ধনসম্পদ ও জানমালের ক্ষতি কেউ করতে পারবে না, নারায়ণগঞ্জে যতদিন বিএনপির নেতাকর্মীরা আছে।
‘গডফাদার শামীম ওসমান সব জায়গায় চাঁদাবাজ তৈরি করেছিল’ মন্তব্য করে সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার ও তার দোসররা পার্শ্ববর্তী রাজ্যে অবস্থান করছে৷ অনেকে দেশের মধ্যে লুকিয়ে থেকে তাদের অবৈধভাবে উপার্জিক কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে৷ কাভাবে এই দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা যায়, সে চেষ্টা করছে। নারায়ণগঞ্জে স্বৈরাচারের গডফাদার ছিল শামীম ওসমান, সে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ লুটপাট করেছে। সব দায়গায় চাঁদাবাজ তৈরি করে চাঁদাবাজি করেছে, বিদেশে কোটি কোটি টাকা সে (শামীম ওসমান) পাচার করে নিয়ে গেছে৷’
গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘এই গডফাদারের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী ছিল সিদ্ধিরগঞ্জে সাত খুন হামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন, যে এখন ফাঁসির আসামি হিসাবে জেলে আছেন। সে জেলের ভেতর থেকে ষড়যন্ত্র করাচ্ছে। টেলিফোনে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছে, কী করে আবার খুন-খারাবি করা যায়, কীভাবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করা যায়, সেজন্য বিনিয়োগও করছে জেলের ভেতর থেকে।’
কারও নাম উল্লেখ না করে ‘এক নেতা’ নূর হোসেনের সাথে জেলখানায় দেখা করেছে জানিয়ে বিএনপি সভাপতি বলেন, ‘আমাদের এক নেতা আছে এই দলে, যখন নূর হোসেন জেলের বাহিরে ছিল তখনও সে তার টাকা নিয়ে রাজনীতি করতো। এখনও সে তার টাকা নিয়ে রাজনীতি করে। সেই ব্যক্তি কিছুদিন আগে ঢাকায় জেলখানায় নূর হোসেনের সাথে মিটিং করেছে৷ সমস্ত তথ্য আমাদের কাছে আছে। টাকা সাপ্লাই দিচ্ছে৷’
তিনি আরও বলেন, ‘গডফাদার শামীম ওসমান যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন সে তাকেও পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। আজকে তাকে দিয়ে আমাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা এবং খুন খারাবি ঘটানোর জন্য চেষ্টা করছে। আমাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। বিএনপির গঠনতান্ত্রিক পদ্ধতি অমান্য করে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় মিছিল মিটিং করে। তাদের ইচ্ছে আমরা তাদের এই মিছিল মিটিং বন্ধ করে দেই। সিদ্ধিরগঞ্জে মিছিল মিটিং করে আপনারা জানেন। এত বড় স্পর্ধা কার, যদি আমরা চাই যে তারা সিদ্ধিরগঞ্জে মিছিল মিটিং করতে পারবে না। মিছিল মিটিং করার কোনো ক্ষমতা তারা রাখে না। কিন্তু তারা চাচ্ছে, এরকম করে যাতে আমরা তাদের উপর আক্রমণ করি, তাদেরকে বাধা দেই তাহলে সেখানে একটা বিরোধ সৃষ্টি করতে পারবে। আর ওই বিরোধ সৃষ্টি করার মধ্যে দিয়ে তারা চায় তাদের ষড়যন্ত্রকে বাস্তবায়িত করতে। আমরা তা আর করতে দিবো না, আমরা ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে এগুলো দেখছি৷ সাবধান হইয়া যান, গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাসান মাহমুদ পলাশ ও সঞ্চালনায় ছিলেন ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন।
সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. আব্দুল বারী ভূইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাসকুল ইসলাম রাজিব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন খন্দকার শিপন, কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাইনুল হোসেন রতন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সুলতান মাহমুদ মোল্লা, নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব কায়সার রিফাত, ফতুল্লা থানা বিএ নপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আলী, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলাম, জাতীয়দাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএম সাদরিল প্রমুখ৷
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৮:৩৮ ২৩ বার পঠিত