বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫

নিউমোনিয়ার টিকা কি এইচএমপিভি সংক্রমণ ঠেকাতে পারবে?

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » নিউমোনিয়ার টিকা কি এইচএমপিভি সংক্রমণ ঠেকাতে পারবে?
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫



নিউমোনিয়ার টিকা কি এইচএমপিভি সংক্রমণ ঠেকাতে পারবে?

চীনের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) আতঙ্ক। বাংলাদেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে ভারতেও। বয়স্ক ও শিশু, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারাই রয়েছেন ঝুঁকিতে।

এইচএমপিভি নতুন না হলেও, এই ভাইরাসকে ঠেকানোর মতো প্রতিষেধক এখনও তৈরি হয়নি। তবে যেহেতু এই ভাইরাসের সংক্রমণে সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, তাই নিউমোনিয়ার প্রতিষেধকে এটিকে মোকাবিলা করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা।

ভারতের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, কেবল নিউমোনিয়ার টিকায় এইচএমপিভি ভাইরাসকে ঠেকানো সম্ভব নয়। তবে ভাইরাসের সংক্রমণে যেসব রোগ দেখা দিচ্ছে, তার তীব্রতা কমানো সম্ভব। সেটা কীভাবে?

মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক অমিত ঘবাড়ে জানিয়েছেন, নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের সংক্রমণ। এই রোগে ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষে‌ত্রে পানিও জমতে পারে। ফুসফুস এমনিতে স্পঞ্জের মতো, কিন্তু নিউমোনিয়া হলে ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘কনসলিডেশন’। এক্স-রে করলে সাদা দেখতে লাগে।

এইচএমপিভি’র সংক্রমণ হলেও ফুসফুসই সবচেয়ে আগে আক্রান্ত হয়। নিউমোনিয়ার মতোই লক্ষণ ফুটে ওঠে। নিউমোনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হলো জ্বর। তার সঙ্গে কাশি। পাশাপাশি, শ্বাসকষ্টও থাকে। সংক্রমণ যত বাড়ে, শ্বাসকষ্টও বাড়তে থাকে। শ্বাস নেয়ার সময়ে বুকে ব্যথা হতে পারে। এছাড়া মাথায় যন্ত্রণা, ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়া, খাওয়ায় অনীহা, সারাক্ষণ বমি বমি ভাবও আনুষঙ্গিক লক্ষণের মধ্যে পড়ে।

এইচএমপিভি সংক্রমণের ক্ষেত্রেও তেমনই হচ্ছে বলে দেখা গেছে। তাই নিউমোনিয়ার টিকা দেয়া থাকলে, ফুসফুসের জটিল অসুখের আশঙ্কা কমবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

নিউমোনিয়ার দু’রকম টিকা আছে— নিউমোকক্কাল কনজুগেট ভ্যাকসিন (পিসিভি) এবং নিউমোকক্কাল পলিস্যাকারাইড ভ্যাকসিন (পিপিএসভি)। পিসিভি টিকা শিশু ও বয়স্কদের জন্য। আর পিপিএসভি টিকা তাদেরই দেয়া হয়, যাদের বয়স ৬০ পেরিয়েছে এবং ফুসফুস দুর্বল বা সিওপিডি, হাঁপানির মতো রোগ বা অন্য কোনো জটিল অসুখ রয়েছে।

ফরিদাবাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালের পালমোনোলজিস্ট রবি শেখর ঝা জানিয়েছেন, পিসিভি ও পিপিসিভি টিকা যদি আগে থেকে দিয়ে রাখা হয়, তাহলে শিশু ও বয়স্করা অনেকটাই সুরক্ষিত থাকবেন। এইচএমপিভি শরীরে প্রবেশ করলেও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে।

শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকায় উপযুক্ত আবহাওয়া পেয়ে নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া কিংবা ভাইরাস আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এইচএমপিভিও তেমনই। আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচি থেকে এই রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। একে ‘ড্রপলেট ইনফেকশন’ বলা হয়।

চার বছর বা তার কম বয়সের শিশু এবং ৬০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের ব্যক্তিদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সেক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার টিকার পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রতিষেধক বা ‘ফ্লু ভ্যাকসিন’ নিয়ে রাখলেও বিপদের ঝুঁকি কমতে পারে বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

সূত্র: আনন্দবাজার

বাংলাদেশ সময়: ১৩:১৫:০০   ৯ বার পঠিত