শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫

সবজি নাগালে, মাছ-মাংস ও তেল-চালে স্বস্তি খুঁজছেন ভোক্তারা

প্রথম পাতা » কৃষি ও বাণিজ্য » সবজি নাগালে, মাছ-মাংস ও তেল-চালে স্বস্তি খুঁজছেন ভোক্তারা
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫



সবজি নাগালে, মাছ-মাংস ও তেল-চালে স্বস্তি খুঁজছেন ভোক্তারা

চাহিদা-জোগানের মারপ্যাঁচে কোনো কোনো শাক-সবজির দাম ওঠানামা করলেও অনেকটাই সাধ্যের মধ্যে চলে এসেছে বেশিরভাগের দাম। তবে মাছ, মাংস, তেল ও চালের চড়া বাজার ভোগাচ্ছে সাধারণ মানুষকে। নিত্যপণ্যের বাজারে তাই কোনো আশ্বাস নয়, স্বস্তির বার্তা চান তারা।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) কেরানীগঞ্জের আগানগর এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ানবাজার ঘুরে দেখা যায়, মাঘের শুরুতে বাজার ভরপুর শীতকালীন শাক-সবজিতে। দোকানগুলোতে শীতকালীন সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।

বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৫০-৬০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, লতি ৬০ টাকা ও পটোল ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ টাকা, গাজর ৪০-৫০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩০-৪০ টাকা, দেশি পাকা টমেটো ৫০ টাকা, শিম ২৫ টাকা, শালগম ২০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতি কেজি ধনেপাতা ২০-৩০ টাকা, পেঁয়াজের কলি ২০-২৫ টাকা, পাতাসহ পেঁয়াজ ৩০, নতুন আলু ৩০-৩৫ টাকা ও পুরাতন আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ২০-২৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা, ব্রকলি ৩০-৪০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সবজি কিনছেন ক্রেতারা। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

দাম কমেছে কাঁচা মরিচেরও। খুচরা পর্যায়ে এটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকায়, আর পাইকারিতে ৪০-৫০ টাকা। এছাড়া বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পুঁইশাক ২৫-৩০ টাকা, লাউশাক ৩০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়।

বিক্রেতারা জানান, শীতকালীন সবজির প্রভাবে বাজারে কমেছে শাক-সবজির দাম। যা এখন ভোক্তার নাগালের মধ্যে। রাজধানীর কারওয়ানবাজারে সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন,

সরবরাহ বাড়ায় কমছে সবজির দাম। কোনো কোনো সবজির দাম ওঠানামা করলেও সপ্তাহ ব্যবধানে বেশিরভাগেরই দাম অনেকটাই স্থিতিশীল। এতে স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

সবজির বাজারের এই স্বস্তির বার্তা শোনা গেল ভোক্তাদের কণ্ঠেও। তারা জানান, শীতের সবজি বাজারে আসায় দাম অনেকটাই এখন নাগালে। প্রীতম ধর নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজার শীতকালীন সবজিতে ভরপুর। গত বছর এ সময় সবজির দাম চড়া থাকলেও এবার অনেকটাই কমেছে। যা ভোক্তাদের জন্য স্বস্তির বিষয়।

তবে ভোক্তাদের এই স্বস্তি ম্লান হয়ে পড়ছে মাছ-মাংস, তেল ও চালের চড়া মূল্যের কাছে। এসব পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে নাকাল ভোক্তার জনজীবন। একটু আগে সবজির বাজারে স্বস্তির বার্তা শোনানো প্রীতমই জানালেন মাছ-চালের বাজারে অসহায়ত্বের গল্প।

তিনি বলেন,

সবজির দাম নাগালে আসলেও চড়া মাছ-মাংস ও চালের দাম। পাশাপাশি ফের অস্থির হচ্ছে তেলের বাজার। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু তার কোনো সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এতে চরম অস্থিরতায় কাটছে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে আরও অস্থির হয়েছে ইলিশের বাজার। কেজিপ্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সুস্বাদু এ রুপালি মাছ। বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩২০০ টাকা, ১ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২৮০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২০০০-২২০০ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১২০০-১৩০০ টাকা ও ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইলিশ বিক্রেতা মো. শুকুর আলী বলেন,

ইলিশ কম ধরা পড়ছে। এতে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। দিন দিন ইলিশের দাম ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে কমছে বেচাবিক্রিও। আর ইলিশের চড়া দামের প্রভাবে কমছে না অন্যান্য মাছের দামও।

বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাছ কিনছেন ক্রেতারা। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।

অস্থিরতা কমেনি চালের বাজারেও। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৮০ টাকা, আটাইশ ৫৮-৬০ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫২-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬-১১৮ টাকায়।

চড়া রাজধানীর চালের বাজার। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

বিক্রেতারা জানান, মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়ায় এর প্রভাব খুচরা পর্যায়েও পড়ছে। দাম বাড়ায় কমেছে চালের বেচাকেনাও। বাড়তি দামের প্রভাবে মানুষ চাল কম কিনছেন।

একই অবস্থা তেলের বাজারেও। দাম বাড়ানোর এক মাস পরও বাজারে কৃত্রিম সংকট কাটেনি বোতলজাত সয়াবিন তেলের। ভোক্তাদের অভিযোগ, বোতলজাত পাঁচ লিটারের তেল কিছুটা পাওয়া গেলেও এক ও দুই লিটারের বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত পরিমাণে। হাতে গোনা দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও তা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

তেলের বাজারের এই অস্থিরতার কথা স্বীকার করে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছে না কোম্পানিগুলো। এতে কিছুটা সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে।

এদিকে বাজারে সোনালি মুরগির দাম কমলেও বেড়েছে ব্রয়লারের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৩০ টাকায়।

প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। ফাইল ছবি

এছাড়া প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৯০-৩০০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকায়।

আর বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।

তবে স্থিতিশীল রয়েছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন লাল ডিম ১৩৫-১৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৩৫-২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন: জীবনযাপনের আনুষঙ্গিক উপকরণে খরচ বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ক্ষোভ সাধারণ মানুষের

এদিকে কিছুটা দাম কমে বাজারে প্রতি কেজি দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকা ও পুরোনো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার ওপরে। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা পর্যন্ত।

প্রতিকেজি দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

আর প্রতি কেজি দেশি রসুন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায় ও আমদানি করা রসুন কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মানভেদে প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০-৩০০ টাকা পর্যন্ত।

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।

আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১:০২:৪৩   ৮ বার পঠিত