রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ফেল করলে ব্যবস্থা গ্রহণ: ফাওজুল কবির

প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ফেল করলে ব্যবস্থা গ্রহণ: ফাওজুল কবির
রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫



চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ফেল করলে ব্যবস্থা গ্রহণ: ফাওজুল কবির

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে অন্যবারের উদ্যোগের চেয়ে এবারের উদ্যোগের পার্থক্য আছে জানিয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, এবার যারা ফেল করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘চার মাসের একটা কর্মপরিকল্পনা করেছি। আশা করছি আগামী বর্ষায় দৃশ্যমান একটা সুফল আমরা পাব। বর্ষার আগে আরও একাধিকবার আমরা আসব, এবার যদি আমরা ফেল করি সেটার দায় নেব। কিন্তু এই ফেল করার জন্য যারা দায়ী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আজ রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা ফাওজুল কবির এসব কথা বলেন।

সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, বীর প্রতীক ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনসহ চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের দায়িত্বপ্রাপ্তরা, চট্টগ্রাম ওয়াসা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি ও নগর পরিকল্পনাবিদসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে চার মাসের স্বল্পমেয়াদি একটা কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতাও বাড়াতে হবে। আমাদের খালগুলো ভরাট হলো কেন? পাহাড় কাটলে তো মাটি এসে খালে পড়বে। পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে তো আবার সেই একই অবস্থা হবে। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে স্পষ্ট একটা অবস্থান আমরা নেব। পাহাড়কাটা বন্ধে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হবে।

তিনি বলেন, খালগুলো পরিস্কার রাখাসহ জলাবদ্ধতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধানরা নিয়মিত তদারকি করবেন। এ ক্ষেত্রে যিনি ফেল করবেন তাকে কিন্তু দায় নিতে হবে। যেখানে পাহাড় কাটা হয় সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ ও ওয়াসার পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করা হবে। পাহাড় কাটার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে, এটা তো হতে পারে না।

উপদেষ্টা আরও বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে যেই টাকা খরচ হয়েছে, তার সুফল যেহেতু এখনো মানুষ পায়নি, সেহেতু নতুন টাকা বরাদ্দ করা একটা সমস্যা। নতুনভাবে আর্থিক সংস্থানের জন্য প্ল্যানিং কমিশনে গেলে বলবে, তোমাকে আগে যে টাকা দেওয়া হয়েছে সেটার কি হলো ?

ফাওজুল কবির খান বলেন, সবার বক্তব্যে একটা বিষয় উঠে এসেছে, খালগুলোতে যে বর্জ্য এসেছে, সেগুলো পরিস্কার করা হয়নি। সেটাকে একটা সামাজিক আন্দোলনের মতো করতে হবে। ১৫ দিনের মতো সময় দিয়ে হাজার খানেক লোককে আমরা নিয়োগ দেব। কেউ যদি খালে কিংবা উম্মুক্ত জায়গায় ময়লা ফেলে তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

কিন্তু আপনি মানুষকে নিষেধ করলেন ময়লা ফেলা যাবে না। কিন্তু ময়লা তো বাসা বাড়িতে রাখা যাবেনা। ময়লা সঠিক সময়ে তুলে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে সিটি কর্পোরেশনকে, বলেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির।

সভায় বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার থেকে তালিকা নিয়েছি। পাহাড় কাটার দুটি ঘটনা আমি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছিলাম। উনি সেখানে লোক পাঠিয়ে আমার কাছে উত্তর দিয়েছেন এগুলো আরএস খতিয়ানে পাহাড় ছিল। এখন পাহাড় হিসেবে রেকর্ডেড নয়। দেখুন দুর্নীতি কোন পর্যায়ে গেছে। বড় বড় পাহাড়গুলো পাহাড় নামে রেকর্ড না করে ব্যক্তির নামে ভিন্ন শ্রেণিতে রেকর্ড করে নিয়েছে। আর এখন তারা সেখানে হাউজিং ব্যবসা করছে। এসব বিষয়ে ভুমি প্রশাসনকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তিও যদি পাহাড়ের মালিক হয় তাকে রেজিস্ট্রি চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। পাহাড় তোমার হলেও কাটতে পারবে না। প্রশাসন যখন পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালান তখন ধরে নিয়ে আসেন শ্রমিকদেরকে। শ্রমিকদের ধরে লাভ কি ? পাহাড়ের মালিককে ধরে নিয়ে আসেন। দুয়েকটা মালিক গ্রেপ্তার করেন, দেখবেন অন্যরাও পাহাড় কাটা থেকে বিরত থাকবে।

পাহাড়ে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা বিদ্যুৎ ও ওয়াসার পানির সংযোগ পায় কি করে এমন প্রশ্ন রেখে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, চট্টগ্রামের আকবরশাহ পাহাড় বাঁচাতে ২০১৫ সাল থেকে মামলা করে যাচ্ছি। ২০২৩ সালে এসে মার খেয়ে গেছি। আজকে ২০২৫ সালে অবস্থান বদলেছে, আমি উপদেষ্টা হয়েছি। এখনও আকবরশাহ পাহাড় কাটে। আপনারা বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করেন না কেন ? সকলকে যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। নাগিন পাহাড়টা কে কাটে খবর নিয়ে জানাবেন।

সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, বীর প্রতীক বলেন, চট্টগ্রামে যে সমস্ত সরকারি সংস্থা কাজ করছেন তাদের নিজেদের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করেছি, জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতোমধ্যে যে খালগুলো খননকাজ শেষ হয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা হস্তান্তর করতে চান। কিন্তু যারা গ্রহণ করবেন তাদের জনবল থেকে শুরু করে প্রযুক্তিগত সহায়তা নেই। আজকের সভায় সমস্যা যেহেতু আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি, আশা করি সমাধানও আমরা বের করতে পারব।

তিনি বলেন, ‘সমস্ত অভিজ্ঞ ব্যক্তি আজকের সভায় মতামত দিয়েছেন, সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হচ্ছে। এখানে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ব্যাপার আছে, আইনি বিষয় আছে, সর্বোপরি অর্থ সংস্থানের ব্যাপার আছে। সবকিছু সমন্বিত করে আমরা একটা ব্যবস্থা নিতে চাই, যাতে জলাবদ্ধতা নিরসনে উল্লেখযোগ্য সফলতা আসে।’

সভায় বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান, মহানগর জামায়াত ইসলামের আমির শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, শিল্পপতি সৈয়দ মাহমুদুল হক, নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, স্থপতি জেরিনা হোসাইন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জোবায়ের আলম মানিক প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৯:১৮   ৮ বার পঠিত