এমবিবিএস ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭৩ নম্বর পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে কোটায় ৪১ নম্বর পেয়েও প্রায় আড়াইশো শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেশি নম্বর পেয়েও বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরই কম নম্বর পেয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসতে থাকে।
বঞ্চিত শিক্ষার্থীরাসহ অনেকের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৪১ নম্বর পেয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরও কোটা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত ভালো হয়নি বলে মত তাদের।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একজন লিখেছেন,
খুলনার দৌলতপুরের মৌমিতা পেয়েছিলেন ৭৩, তিনি মেডিকেলে চান্স পাননি। তবে মাত্র ৪১ পেয়ে দেশের সেরা ৩ নম্বর পজিশনে থাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চান্স পেয়েছেন। জাতি কি এখন জানতে চাইবে কোন কারণে ৪১ পাওয়া মেধাবী ৭৩ পাওয়া অমেধাবীকে হারিয়ে মেধা তালিকায় সেরা তিনের মধ্যে ঢুকলেন? ভুগিঝুগি কোনো ব্যাখ্যা শুনতে চাই না। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা পদত্যাগ করুন, না করতে চাইলে তাকে টেনে নামান। শয়তানির একটা সীমা থাকে, সীমা অতিক্রম করেছেন তিনি।
একজন লিখেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা কেমনে এখনও কোটা সুবিধা পায়? এই সুবিধা চাওয়ার আগে তাদের তো লজ্জায় মরে যাওয়া উচিত। কয় প্রজন্ম ধরে তারা এই সুবিধা পেতে চায়? মেডিকেল ভর্তিতে ৭০ নম্বর পেয়েও কেউ চান্স পেলো না আর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা ৪১ নম্বর পেয়ে চান্স পেয়ে গেলো এটা কেমনে দেখেন ওনারা? লজ্জা লাগে না?
অন্য একজন লিখেছেন, হায়রে কোটা! জুলাই আন্দোলনে শহীদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। ১৩৭ স্কোরে মেডিকেল পায় কিন্তু ১৭৩.৫০ স্কোরে পায় না।
আরেকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজের রেজাল্ট তুলে ধরে লিখেছেন,
কারা করেছে এটি? বুজলাম না। ৭১, ৭২, ৭৩ পেয়ে কিভাবে ঢাকা মেডিকেল হয়? ১৩ জন কেন মুক্তিযোদ্ধা কোটাতে ডিএমসি পাবে? অন্যদিকে দেখলাম ৩৭ পেয়ে চান্স হয়েছে। এত এলোমেলো অবস্থা কেন তদন্ত হওয়ার দরকার। সিনিয়র, জুনিয়ররা মতামত জানাইয়েন।
ফেসবুকে এক পোস্টে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় এখনও কীসের কোটা? আজ থেকেই এই শোষণের শেষ হতে হবে। ফুলস্টপ।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার লিখেছেন, ‘৪১ পেয়ে না-কি মেডিকেলে চান্স পেয়েছে কোটার জোরে, অথচ ৭৩ পেয়েও চান্স পায়নি! ছোটরা দাঁড়িয়ে যাও, পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ। গণঅভ্যুত্থানের সূচনা তো কোটা থেকেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমিন গণমাধ্যমকে বলেন, কোটার বিষয়টি ভ্যারিফাই করা হবে। কোটার কাগজপত্র ২৩ থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে আনার জন্য প্রার্থীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাগজপত্র দেখে করে কোটার ফলাফল চূড়ান্ত করা হবে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৫৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে মোট ৫ হাজার ৩৮০টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে-মেয়ের জন্য ২৬৯টি এবং পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জন্য ৩৯টি আসন সংরক্ষিত। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটার ১৯৩ জন শিক্ষার্থী পাস নম্বর তুলতে পেরেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৭:২০ ৮ বার পঠিত