বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আল্লাহর শাস্তি না পরীক্ষা?

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আল্লাহর শাস্তি না পরীক্ষা?
বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫



প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আল্লাহর শাস্তি না পরীক্ষা?

সুনামি, ভূমিকম্প, বন্যা ও আগুনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যুগে যুগে ঘটে আসছে। এসব ঘটনার ফলে মানুষ মৃত্যু, ধ্বংস ও সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হয়। বিশ্বাসীরা জানতে চান, এসব কেন ঘটে, আর অবিশ্বাসীরা আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকৃতি, কারণ ও আমাদের করণীয় নিয়ে এই লেখায় আলোচনা করা হয়েছে।

১. পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী। পৃথিবী একটি অস্থায়ী জগৎ, যেখানে ভালো-মন্দ উভয়ের অস্তিত্ব রয়েছে। এখানে সুখ-দুঃখ উভয়ই পরীক্ষার অংশ। আল্লাহ বলেন,

আমি তোমাদের পরীক্ষা করি মন্দ ও ভালো দ্বারা। (সুরা আল-আম্বিয়া: ৩৫)

২. আল্লাহর আইন ভঙ্গের পরিণতি। আল্লাহ এই পৃথিবীতে শৃঙ্খলার জন্য প্রাকৃতিক ও নৈতিক আইন সৃষ্টি করেছেন। এসব আইন ভঙ্গ করলে বিপর্যয় ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে রোগ হয়, পরিবেশ নষ্ট করলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে।

৩. পাপীদের শাস্তি। কখনো আল্লাহ দুর্যোগের মাধ্যমে পাপীদের শাস্তি দেন। কুরআনে উল্লেখ রয়েছে, আমি অনেক জাতিকে তাদের পাপের কারণে ধ্বংস করেছি। (সুরা আল-হাজ্জ: ৪৫) তবে কোনো বিশেষ দুর্যোগ আল্লাহর শাস্তি কিনা, তা নবুওয়তের যুগ শেষ হওয়ার পর থেকে নির্ধারণ করা কঠিন।

৪. পরীক্ষা এবং ধৈর্যের চর্চা। দুর্যোগ কখনো পরীক্ষার অংশ। আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা এবং সম্পদের ক্ষতি দ্বারা। (সুরা আল-বাকারা: ১৫৫)

এমনকি নবীগণও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছেন। তাদের ধৈর্য আমাদের জন্য শিক্ষণীয়।

৫. মানবতার জন্য দায়িত্ব। দুর্যোগে কষ্টে থাকা মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। এটি আমাদের মানবিকতা এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষা। এক হাদিসে আল্লাহ বলেন, আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম, তুমি আমাকে আহার দাওনি। (হাদিসে কুদসি, মুসলিম)

আমাদের করণীয়

১. আল্লাহর আইনে ফিরে আসা: প্রাকৃতিক ও নৈতিক আইন মেনে চলা এবং আল্লাহর নিকট তওবা করা।

২. ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল: যদি দুর্যোগ পরীক্ষা হয়, ধৈর্য ধরতে হবে। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের জন্য পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

৩. সহমর্মিতা এবং দানশীলতা: দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা, কারণ এটি আমাদের প্রতি আল্লাহর পরীক্ষাও হতে পারে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষকে সতর্ক করে, আত্মসমীক্ষার সুযোগ দেয়। আল্লাহর প্রতি ফিরে আসার আহ্বান জানায়। এটি শাস্তি, পরীক্ষা বা আল্লাহর ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। তাই আমাদের উচিত প্রার্থনা, তওবা ও সৎকর্মের মাধ্যমে এই বিপর্যয়কে মোকাবিলা করা। হে আল্লাহ, আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তৌফিক দিন। আমিন।

মূল: ড. মুজাম্মিল এইচ সিদ্দিকি, অনুবাদ: মুফতি আবদুল্লাহ তামিম

বাংলাদেশ সময়: ১১:০৩:৫১   ৭ বার পঠিত