জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে সরিষাবাড়ীতে বন্ধ আলহাজ্ব জুটমিলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ বিনষ্টসহ দিনের পর দিন হচ্ছে চুরি। এতে নেই কোন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা নজরদারি। তাই শ্রমিক ও স্থানীয়রা বলছেন, এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ, এটি রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব ও জরুরি।
মিল শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১৮ সালে ২০ জুলাই ১৫ কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বিনা নোটিশেই বন্ধ হয়ে যায় আলহাজ জুটমিল। এরপর থেকেই মিলটি চালুর দাবিতে বিভিন্ন পর্যায়ে আন্দোলন করে আসছে বেকার শ্রমিকেরা। তবুও কর্তৃপক্ষের মিলছে না সাড়া। এদিকে দীর্ঘদিন মিলের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। যার প্রেক্ষিতে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে পুরো মিল এলাকা এবং বিভিন্ন গাছপালায় সৃষ্টি হয়েছে অরণ্য। এই সুযোগে স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতিকারী মিলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিষয়টি মালিকপক্ষকে অবগত করা হলেও নিচ্ছেন না কোন প্রতিকার প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
এছাড়াও তারা জানান, ১৯৬৭ সালে সরিষাবাড়ী পৌরসভার মাইজবাড়ি-দিয়ারকৃষ্ণাই এলাকায় আলহাজ জুট মিল স্থাপিত হয়। এ মিলে পাটের তৈরি বস্তা, ব্যাগ ও কার্পেটের সুতা প্রস্তুত করা হয়। এখানে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫ মেট্রিক টন পণ্য উৎপাদন হতো। এখানে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন।
এক সময়ে পাটশিল্পের জন্য দেশের ‘দ্বিতীয় ড্যান্ডি’ হিসেবে খ্যাত ছিল এই আলহাজ্ব জুট মিল। কিন্তু হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের কর্মজীবনে নেমে আসে বেকারত্ব ও হতাশার দুরবস্থা। তাই বন্ধ মিলটি পুনরায় চালুর দাবিতে গত ৭ বছর যাবত দফায় দফায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে আসছেন শ্রমিক ও স্থানীয় জনতা।
এদিকে দাবিপুরণে মিল কর্তৃপক্ষ চালুর প্রতিশ্রুতি দিলেও হচ্ছে না তা বাস্তবায়ন। অপরদিকে দিনের পর দিন মিলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ হচ্ছে বিনষ্ট এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছে চুরি। সব মিলিয়ে মিলটি আদৌও খুলবে কিনা এই নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
বর্তমান মিলের পাহারায় থাকা কর্মরত কর্মচারী মাহবুবুর রহমান মাফু বলেন, মেলটি বন্ধ হওয়ার সময় ৮-১০ জন নিরাপত্তা কর্মী দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন তাদের বেতনাদি না দেওয়ায় তারা চাকরি ছেড়ে চলে যান। বর্তমানের মিলটি রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্বে আছেন মাত্র তিনজন কর্মচারী। কিন্তু মিলটির আয়তন বড় হওয়ায় সঠিকভাবে তারা পাহারা দিতে পাচ্ছেন না বলে বিভিন্ন সময় মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্ততারা।
আরেক নিরাপত্তা কর্মী মোহাম্মদ আলী জানান, আমরা তিনজন এখনও কর্মরত রয়েছি কিন্তু বেতন পাচ্ছি না। মালিক বলেছেন, পরবর্তীতে সমস্ত টাকা একসাথে দিয়ে দিবেন। সেই আশাতেই চাকরি করছি। তবে এতোবড় প্রতিষ্ঠানে তিনজন পাহারাদার অপ্রত্যূল। চোরের দল প্রাচীর টপকিয়ে জানালা ভেঙে মেশিনের পিতলের বভিন কেরিয়ার, ফ্যান, মটর, ইলেক্ট্রিক তারসহ মুল্যবান যন্ত্রাংশ ও জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি মালিকপক্ষকে আমরা জানিয়েছি, তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়াও তিনি বলেন, মেশিনের মালামাল চুরির সময় আমরা চোরকে হাতে নাতে ধরেছিলাম। কিন্তু তাদের সংখ্যা বেশি থাকায় আমরা ভয়ে ছেড়ে দিয়েছি। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেয়া আছে। এছাড়াও এই চোর চক্রের মদদ দিচ্ছেন স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা বলে জানান তিনি।
উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক আলহাজ জুট মিলের শ্রমিক কামরুল হাসান বুলবুল বলেন আ.লীগের শাসন আমলে মিলটি বন্ধ হয়েছে। মেইলটি বন্ধ হওয়ার পর থেকেই আমরা শ্রমিকেরা বিভিন্ন পর্যায়ে চালুর দাবি জানিয়ে আসছি। এদিকে মিলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ যদি দিনের পর দিন এইভাবে চুরি হয়। তাহলে বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা মালিকপক্ষকে অনুরোধ করবো মিলটির বিদ্যুৎ সংযোগ সচল রেখে নিরাপত্তা জোরদার করতে। এছাড়াও মিলটি সুরক্ষায় প্রশাসনের আশুদৃষ্টি কামনা করেন শ্রমিক ও স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে মিল মালিকের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। অন্য মাধ্যমে জানা যায় তিনি দেশের বাহিরে আছেন।
এ বিষয়ের সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ চাঁদ মিয়া জানান, বন্ধ আলহাজ্ব জুটমিলের চুরির ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০২:০৫ ১০৯ বার পঠিত