লিবিয়ার শ্রম ও পুনর্বাসন মন্ত্রী প্রকৌশলী আলী আবেদ আল-রেদার সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার।
২৩ মার্চ লিবিয়ার শ্রম মন্ত্রীর দপ্তরে হওয়া বৈঠকে উভয়পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় এবং অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
বৈঠকে মন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, অবৈধ অভিবাসনের ফলে লিবিয়ায় বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি জানান, কিছু বাংলাদেশি অভিবাসী পাচারকারীদের মাধ্যমে অবৈধভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করে জটিলতা ও হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছেন, যা শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি স্পষ্ট করেন যে, লিবিয়ার শ্রম ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় কেবলমাত্র বৈধভাবে প্রবেশ করা কর্মীদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
পাশাপাশি, লিবিয়ায় কর্মরত বিভিন্ন পেশার শ্রমিকদের নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে বৈধতা দেওয়ার জন্য তার মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানান।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এই প্রতিশ্রুতিতে বাংলাদেশ লিবিয়ার সঙ্গে জনশক্তি সহযোগিতা বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, যার আওতায় বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু স্বাস্থ্য পেশাজীবী, উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী, অডিটর, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ লিবিয়ায় নিয়োগ পেয়েছেন। এসব জনশক্তি লিবিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন এবং তাদের পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার জন্য প্রশংসিত হচ্ছেন।
রাষ্ট্রদূত বিশেষভাবে লিবিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত বাংলাদেশি স্বাস্থ্য কর্মীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং মিসরাতায় একটি কোম্পানির শ্রমিকদের বকেয়া আদায়ে মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
রাষ্ট্রদূত জোর দিয়ে বলেন, বৈধভাবে আগত বাংলাদেশি কর্মীরা অনিয়মিত অভিবাসনের পথে পা বাড়ান না। তিনি সম্প্রতি নোভা এজেন্সির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে বলেন, বৈধভাবে আসা বাংলাদেশিদের সাগরপথে ইউরোপ গমনের প্রচেষ্টা সংক্রান্ত তথ্য সঠিক নয়। বরং যারা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন তারা মূলত বিভিন্ন বন্দর দিয়ে পাচারকারীর সহযোগিতায় লিবিয়ায় প্রবেশ করেন। তারা কখনো বৈধ চ্যানেল বা ভিসার মাধ্যমে লিবিয়ায় প্রবেশ করেন না।
এ বিষয়ে মন্ত্রী লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দরের মাধ্যমে প্রবেশ করা বাংলাদেশিদের তথ্য বিশ্লেষণ করে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। রাষ্ট্রদূত আরও জানান, দূতাবাস পাচারের শিকার অভিবাসীদের দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং এ ব্যাপারে তিনি লিবিয়া সরকারের অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন।
রাষ্ট্রদূত লিবিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে বেনগাজী দিয়ে প্রবেশের ফলে জটিলতা, দুখুল না থাকা, নির্ধারিত ট্যাক্স ও মেডিকেল ইনস্যুরেন্স সংক্রান্ত সমস্যা এবং বিভিন্ন লেবার কোম্পানির তথ্যের বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি লিবিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশিদের বৈধতা অর্জনের প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং মেয়াদ বৃদ্ধিত অনুরোধ জানান।
এ ছাড়া, তিনি লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের মুক্তিপণের জন্য অপহরণ ও আটকের ঘটনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এসব সমস্যার সমাধানে মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ ও লিবিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে মন্ত্রীকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৭:৫৭ ৪৪ বার পঠিত