সারাদেশ যখন বাংলা নতুন বছর উদযাপনে মাতোয়ারা সবাই, তখন এ থেকে বাদ যায়নি ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারের কারাবন্দিরাও। প্রশাসনিক নিরাপত্তায় চার দেয়ালের ভেতর থেকে মুক্ত বাতাসে এসে ঢোল-তবলার ছন্দে, নেচে গেয়ে নববর্ষ উদযাপন করলেন তারা। শুধু যে বন্দিরা একাই এই উৎসবে মেতেছে তা নয়, সঙ্গে তাদের আত্মীয়-স্বজনেরাও পান্তা ও ভর্তা, মাছ খাবারে অংশ নেন।
সোমাবার (১৪ এপ্রিল) নববর্ষ উপলক্ষ্যে ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারের বন্দিদের জন্য এমন আয়োজন করা হয়েছে। দুইশ তিরানব্বই জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার মো. শাহারিয়ার আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, কারা অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী নববর্ষের প্রথম দিনে সকালের খাবারে বন্দিদের জন্য এই আয়োজন করা হয়। কারাবন্দিরাদের দেখতে আসা তাদের স্বজনদের কেউ খাওয়ানো হয়। করা হয় মেডিকেল চেকআপের পাশাপাশি আয়োজন করা হয়েছে শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন। এতে অংশ নেন কারাগারে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানরা।
জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, শুধু পান্তা নয়, দুপুরের খাবারে পোলাও, মুরগির মাংস, ডাল, পান-সুপারি এবং মিষ্টি খেতে দেয়া হবে কারাগারের কয়েদি এবং হাজতি বন্দিদের। পহেলা বৈশাখ ঘিরে কারাগারের ভেতর বন্দিদের বিনোদনের ব্যবস্থা করাও হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এতে কারাবন্দি নিজেরাই নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাস করেন। নতুন বছরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খাবার খেয়ে খুশি কারাবন্দিরা। সেজন্য ধন্যবাদ জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষকে।
কারাগারে বন্দী স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে এসে দর্শনার্থীরা বলেন, প্রথমে আসার পরেই কারাকর্তৃপক্ষ আমাদের বৈশাখ উপলক্ষে পান্তা-মাছভর্তা দিয়ে খেতে দিয়েছে। আমাদের মেহমানের মতো আপ্যায়ন করেছে। আজকের মতো একটি আনন্দময় দিনে তারা আমাদের ও কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের এত সুন্দর আপ্যায়ন করেছে, যা প্রশংসার দাবিদার।
ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারের জেলার মো. শাহারিয়ার আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখানে বন্দিদের জন্য পান্তাসহ বিভিন্ন উন্নতমানের খাবারের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এ ছাড়া কারাবন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে আসা স্বজনদের জন্যও খাবারের ব্যবস্থা করেছি। যারা আমাদের স্টাফ তাদের বাচ্চাদের জন্যও বিভিন্ন আয়োজন করেছি। আমাদের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’
এর আগে কারা অধিদফতরের এক নির্দেশনায় দেশের বিভিন্ন কারাগারে বাংলা নববর্ষ পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়। কারা অধিদফতরের প্রত্যেক বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক বরাবর দেয়া এক পত্রে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বন্দিদের জন্য উন্নতমানের খাবার, সকালের মেন্যুতে সুবিধা মতো বাঙালি খাবার মাছসহ দুপুরে পোলাও, মুরগির মাংস, ডাল, পান-সুপারি, মিষ্টি পরিবেশন করার কথা বলা হয়।
উন্নত খাবারের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী মাছের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কারাগারে উৎসবমুখর পরিবেশে বন্দিদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী আঞ্চলিক পিঠা, হাওয়াই মিঠাই ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে বলেছে কারা অধিদফতর।
অন্যদিকে, নববর্ষ উপলক্ষে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মেসে স্বাভাবিক রেশনের উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা করা, উন্নত খাবারের জন্য পহেলা বৈশাখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩২:৫৮ ১৫ বার পঠিত