জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোঃ সাজুর বিরুদ্ধে এক অসহায় পরিবারকে অত্যাচার, ঘরবাড়ি ভাঙচুর করাসহ এলাকা ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (২০ এপ্রিল) বিকালে কুটামনি স্কুলপাড়া গ্রামের এলাকাবাসী ওই ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে ওই অত্যাচারী ও জুলুমকারী বিএনপি নেতা সাজুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সহ দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।
নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী লতা বেগম বলেন, আমার ছেলে সজীব একই গ্রামের সুমনের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা সুদের উপর নেয়। এরপর সে প্রতিমাসে সুদের টাকা পরিশোধ করে। হঠাৎ সাংসারিক হীনতায় সুদের টাকা পরিশোধ বন্ধ করে দিলে। সুমন তার স্বাক্ষরিত কাটিছে দেড় লক্ষ টাকা বসিয়ে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সাজু সহযোগিতায় টাকা আদায়ের জন্য সজীবকে চাপ সৃষ্টি করে। পরে তাদের চাপে সজীব ভয়ে শ্বশুর বাড়ি চলে গেলে, সেখানেই গিয়ে তাকে মারধর করে এবং তার বাড়িতে গিয়ে তার বাড়ি ভাঙচুর করে। পরে এই ভয়ে সে দীর্ঘদিন যাবত পালিয়ে বেড়াচ্ছে তার পরিবার নিয়ে।
সজীব জানান, আমি ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে ২০ হাজার টাকা সুদ দিয়েছি সুমনকে। এরপরও সে আমার কাছে দেড় লক্ষ টাকা দাবি করছে। আমি তাকে আরো ৪৫ হাজার টাকা দিতে চেয়েছি, তবুও সে নিবে না। পরে আমার বিরুদ্ধে মামলা করে দিলে আমি জেল খাটি। এরপর জেল থেকে জামিনে বের হয়ে তাদের ভয়ে আমি আমার পরিবার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারছি না। আমি সরকারের কাছে আমার পরিবারের নিরাপত্তা সহ এ জুলুমকারী ও অত্যাচারীদের বিচার চাই।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর এলাকায় নব উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে বিএনপি’র নামধারী কিছু নেতা কর্মী। তাদের মধ্যে রয়েছে কেন্দুয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোঃ সাজু মিয়া। সে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে সামাজিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে গ্রাম্য সালিশ বিচার ও মীমাংসার নামে শুরু করেছে ঘুষ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, ভূমি দখল সহ নানা অসামাজিক কর্মকান্ড। তার এসব অমানবিক কর্মকান্ডে এলাকাবাসী আজ অতিষ্ঠ।
এলাকাবাসী জানান, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সাজু গ্রামের অসহায় নিরীহ দরিদ্র মানুষগুলোর পারিবারিক ঝগড়া বিবাদের ইস্যুকে কেন্দ্র করে শালীর বিচারের নামে ঘুষ বাণিজ্য করে। এছাড়াও প্রবাসী পরিবারগুলোকে টার্গেট করে সাজানো-মিথ্যা ঘটনা তৈরি করে বিচার কার্যক্রম চালিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। তার এই অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে গেলেই তার বিরুদ্ধে মামলা হামলা সহ প্রাণনাশের হুমকি দেয় সে।
তাই, জামালপুর জেলা বিএনপি, উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দের কাছে এলাকাবাসীর জোর দাবি, এসব অভিযোগ তদন্ত করে এই ভণ্ড, প্রতারক, এবং দলের ভাবমূর্তি নষ্টকারী সাজু মিয়াকে অবিলম্বে বিএনপির সকল পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে আইনের আওতায় এদের শাস্তি প্রদানের দাবি জানান তারা।
৬নং ওয়ার্ড কৃষক দলের সভাপতি মোঃ বেলাল হোসেন বলেন, সাজু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে—মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা, নারী কেলেঙ্কারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা থেকে চাঁদাবাজি, সরকারি ত্রাণ আত্মসাৎ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ও জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের হয়ে কাজ করার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে। তবুও সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না এটি খুবই দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সাজু বলেন, গ্রামবাসীর এসব কথা মিথ্যে বানোয়াট। তারা অযথা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এ বিষয়ে জামালপুর সদর থানার ওসি আবু ফয়সল মুহাম্মদ আতিক বলেন, এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৫:৪৫ ১৬৬ বার পঠিত